আজকে এই অফিস, কালকে আরেক অফিস—এ ধরনের ‘মুভমেন্ট’ দেখে বুঝতে পারছি না কে বিপদে আছে—আমরা না ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল’ (আইএমএফ)। দৃশ্যত আমরা একটু অস্বস্তিতে আছি। আছি বলেই কিছুটা স্বস্তির জন্য লোন নেয়া হয়েছে আইএমএফ থেকে। কত ডলারের লোন? মাত্র ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন সমান শতকোটি) ডলার। তাও দেয়া হবে তিন বছরে। টাকার অংকে বছরে কত? হবে মাত্র ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকা। আমাদের যে অর্থনীতি, অর্থনীতির যে আকার সে তুলনায় আইএমএফের লোনের অংক খুব বেশি নয়। কিন্তু এই লোন নিয়েই হয়েছে এখন যত সমস্যা। সমস্যা মানে লোনের অনেক শর্ত আছে। সব আমাদের মানতে হবে। কোন শর্ত, কবে, কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে তা পুর্বনির্ধারিত। তা প্রতি মুহূর্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে তারা। সে সূত্রেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের একটি দল এখন বাংলাদেশে, মানে ঢাকায়। তারা আজ এ সরকারি অফিসে যাচ্ছে তো কাল অন্য অফিসে। কখনো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অফিসে, কখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ে, আবার কখনো বাংলাদেশ ব্যাংকে।
কখনো জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে, কখনো কৃষি মন্ত্রণালয়ে। কত প্রশ্ন তাদের! আমাদের সরকারি কর্মকর্তারা তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে গলদ্গর্ম প্রায়। এ-সংক্রান্ত খবর প্রতিদিন কাগজে পড়ছি। এতে একটা উপকার আমাদের হচ্ছে। অনেক পরিসংখ্যান/তথ্য যা আমরা জানতাম না তা জানতে পারছি। সরকারের সত্যিকারের অবস্থান কী তাও জানতে পারছি। অনেক তথ্য! এমনকি অনেক গোপন তথ্য বা চাপা দেয়া পরিসংখ্যানও আমরা পাচ্ছি। এটা আমাদের লাভ। কিন্তু আইএমএফের লাভ কী? আইএমএফ আসলে কী চায়? মোটা দাগে আমার মনে হয় তারা তিন-চারটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। খবরের কাগজ পড়ে মনে হয় তারা বলছে, তোমাদের রাজস্ব বাড়াতে হবে, রাজস্ব আদায় তোমাদের ভালো নয়। রাজস্ব প্রশাসন ঢেলে সাজাও।
কর মৌসুমের সংস্কৃতি থেকে তোমরা বেরিয়ে আসো। দুই নম্বরে তারা চায় ভর্তুকির সংস্কৃতি ভাঙতে। তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস, সার ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রদত্ত ভর্তুকি ধীরে ধীরে তুলে দিতে হবে। আবার তারা এও বলছে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। এ স্ববিরোধী অবস্থানে রয়েছে তারা। তৃতীয় যে বিষয়টির ওপর তারা গুরুত্ব দিচ্ছে তা হচ্ছে ব্যাংক খাতে সুশাসন। সেখানে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে, কারণ এর পরিমাণ খুব বেশি। সুদের হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। আমানত ও ঋণের ওপর সুদের হার বাজার ঠিক করবে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের হিসাবায়ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে করতে হবে। ব্যাংকের মূলধন, প্রভিশন (সংরক্ষণ) পর্যন্ত হতে হবে। এখন অনেক ব্যাংকের পর্যাপ্ত মূলধন নেই। অনেক ব্যাংকের পর্যাপ্ত সংরক্ষিত ফান্ড নেই যা দিয়ে জরুরি অবস্থা মোকাবেলা করা যায়, খেলাপি ঋণের বোঝা টানা যায়। বিশেষ করে তাদের নজর খেলাপি ঋণের ওপর এবং ব্যাংক মালিকদের অতিরিক্ত ক্ষমতা খর্ব করার ওপর। মোটা দাগে আমার কাছে মনে হয় এ হচ্ছে আইএমফের শর্ত তালিকা, অবশ্যই ছোটখাটো শর্ত বাদে। এটা ভিন্ন বিষয়।