উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে হতাশ হয়ে পড়েন এক ছাত্রী। এরপর থেকেই সব সময় তাঁর মনে হচ্ছিল, পরিবার ও আত্মীয়স্বজন তাঁকে নিয়েই আলোচনা করছেন, কটাক্ষ করছেন। প্রচণ্ড হতাশায় তিনি অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দেন। বন্ধুরা পাস করে গেছেন, তাই তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এভাবে হতাশায় কাটছিল তাঁর দিন।
একদিন কাছের এক ব্যক্তির কাছে সরকারের বিনা মূল্যের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কথা জানতে পারেন। ঢাকার বাইরে থাকেন বলে অনলাইনে কয়েকটি অধিবেশনে ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারের (এনটিসিসি) চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীর কাছ থেকে কাউন্সেলিং (ব্যক্তিগত বা মানসিক সমস্যা সমাধানে পেশাদার কারও সহায়তা ও পরামর্শ নেওয়া) সেবা নিচ্ছেন। এখন তাঁর সমস্যাগুলো বেশ উন্নতির দিকে।
ট্রমা বলতে বোঝানো হয়, কোনো দুর্ঘটনা বা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে মানুষ মানসিক ও শারীরিক আঘাত পাওয়া। এনটিসিসি থেকে হতাশা, বিষণ্নতাসহ যেকোনো মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সরাসরি, টেলিফোনে ও অনলাইনে বিনা মূল্যে সেবা দেওয়া হয়। তবে বিনা মূল্যের এই সরকারি সেবা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত সাড়ে ১২ বছরে মাসে গড়ে মাত্র ১৩ জন এই প্রতিষ্ঠানের সেবা নিয়েছেন। মাসে অধিবেশন পরিচালিত হয়েছে গড়ে ১১২টি।
এই প্রতিবেদকের পরিচিত সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাস এক তরুণী অনেক দিন ধরেই বিষণ্নতায় ভুগছেন। এ অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠতে তিনি কাউন্সেলিং নিতে চাইছিলেন। কিন্তু আর্থিক সংগতির বিষয়টিও বিবেচনায় নিচ্ছেন। তাই কম টাকায় কোথায় কাউন্সেলিং নেওয়া যায়, সেটার খোঁজ করছিলেন। সরকারি এমন একটি বিনা মূল্যের সেবার তথ্য তিনি জানেন না।
একজন অভিভাবক এই প্রতিবেদককে বলেন, তাঁর মেয়ে পরীক্ষাভীতিতে ভোগে। একবার মেয়ের পরীক্ষাভীতি কাটাতে তিনি অনলাইনে দুই হাজার টাকা করে সপ্তাহে দুই দিন করে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীর কাছে মাসে আটটি কাউন্সেলিং করিয়েছেন। এতে এক মাসে খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। এনটিসিসিতে বিনা মূলের এই সেবার কথা তিনি কখনোই শোনেননি।