রন্ধনশিল্পী আইরিন সুলতানার রেসিপিতে কাতলা মাছের ঝোল আলাদা জায়গা করে নিতে পারে খাবার টেবিলে।
মাছের ঝোল মেখে ভাত মানে হল- বাঙালি রসনায় পরম তৃপ্তিতে চেটেপুটে খেয়ে পেট ভরাবে।
উপকরণ
কাতলা মাছ ৬ টুকরা। মাঝারি আকারের পেঁয়াজ ২টি। কাঁচা মরিচ ৪টি। বড় আলু ২টি। ধনেপাতা কুচি সামান্য। সরিষার তেল প্রয়োজন মতো। লবণ প্রয়োজন মতো। হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ। লাল মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ। ধনিয়া গুঁড়া উঁচু উঁচু করে ১ চা-চামচ। জিরা গুঁড়া উঁচু উঁচু করে ১ চা-চামচ। গরম মসলা গুঁড়া এক চা-চামচ। টক দই ২ টেবিল-চামচ। চিনি আধা চা-চামচ। আদা বাটা ১ চা-চামচ। রসুন বাটা ১ চা-চামচ। পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল-চামচ।
রান্নার প্রস্তুতি
এই রান্না মূলত মাছের মাথা, ফুলকা, কানকো, লেজ, পেটি নিয়ে; তবে এর সাথে দুয়েক টুকরা মাছের গাদা নেওয়া যাবে। মাছে হলুদ ও লবণ মাখিয়ে নিতে হবে।
হলুদ, লাল মরিচ, জিরা, ধনিয়া গুঁড়া একটি বাটিতে নিয়ে পানি দিয়ে গুলে রাখতে হবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। মসলা এভাবে কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে পরে রান্নাতে দিলে অনেকটাই বাটা মসলার মতো স্বাদ ও রং আসে।
গুঁড়া মসলা তেলে দিলে চট করে পুড়ে যেতে পারে, কিন্তু এভাবে পানিতে ভিজিয়ে রেখে কড়াইতে দিলে মসলা পুড়ে যাবে না।
দই ফেটিয়ে রাখতে হবে। আলু ডুমো ডুমো করে কেটে হলুদ ও লবণ মাখিয়ে নিতে হবে। যেহেতু পেঁয়াজ বেরেস্তা করা হবে তাই জুলিয়ান বা ঝিরি ঝিরি করে কেটে রাখতে হবে।
রান্নার সব উপকরণ রান্নাঘরে বাটিতে বা থালায় সাজিয়ে পাশাপাশি রেখে দিন। এতে কারও সহযোগিতা ছাড়াও একা একা মনোযোগ দিয়ে রান্না করা যায়; রান্নার সময় এটা সেটা দিতে তাড়ুহুড়ো হয় না কিংবা ভুল করে ছুটে যায় না।
রান্না শুরু
চুলায় কড়াইতে তেল দিয়ে আগে পেঁয়াজ বেরেস্তা করে তুলে রাখতে হবে। আলু ভাজতে ভাজতে হালকা লালচে হলে তুলে নিতে হবে। মাছের টুকরা হালকা লালচে করে ভেজে নিতে হবে।
এবার তেলে সামান্য বেরেস্তা দিতে হবে। এরপর একে একে পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা ও আদা বাটা নিয়ে মসলা ও বেরেস্তা ভুনা করতে হবে।
সামান্য লবণ দিতে হবে যেন মসলা ভুনাতে স্বাদ আসে এবং ভুনা করার সময় ছিটে না আসে। মসলা ভুনা যেন পুড়ে না যায় তাই অল্প করে পানি দেওয়া যায়।
এভাবে দেড় থেকে দুই মিনিট নেড়ে এবার পানিতে গুলে রাখা গুঁড়া মসলা কড়াইতে দিতে হবে। অল্প অল্প পানি ঢেলে মসলা এবার এক মিনিট ভুনা করতে হবে।
এবার ফেটিয়ে রাখা টক দই ঢেলে দিতে হবে। টক দই যোগ করার সময় চুলার আঁচ অনেকটা কমিয়ে দিতে হবে। এতে করে টক দই মসলায় দেওয়ার পর দানা দানা হয়ে যাবে না। আর যদি দানা দানা হয়েও যায়, তাহলে মসলা ভুনা নেড়ে নেড়ে করতে হবে মাঝে মাঝে পানি যোগ করে।
লবণ চেখে দেখে প্রয়োজনে আরেকটু যোগ করা যায়। আধা চামচ চিনি যোগ করতে হবে। আবার চিনি এড়িয়ে যেতে চাইলে না দিলেও হবে।
মসলা ভুনাটা একটু সময় নিয়ে করলে দই যোগ করার পর টক স্বাদটা কেটে যাবে। এই সময় একটি কাঁচা মরিচ ভেঙে দিতে হবে যেন মরিচের ঝাল ও সুগন্ধ মিশে যায়।
মসলা ভুনা হলে আলু দিয়ে নাড়তে হবে এক মিনিট। তারপর মাছ দিতে হবে। অল্প পানি যোগ করে আবার এক মিনিট নাড়তে হবে।
মাছের মাথা আস্ত না রেখে চামচ দিয়ে খানিক ভেঙে ভেঙে দিতে হবে, তাতে ঝোলের স্বাদ বাড়বে।
সামান্য একটু বেরেস্তা রেখে দিয়ে বাকি বেরেস্তা মিশিয়ে দিতে হবে।
গরম মসলা গুঁড়া ছিটিয়ে দিয়ে ঝোলের জন্য বেশি করে পানি দিতে হবে। এই রেসিপি ভুনা ভুনা না করে ঝোল ঝোল হবে।
ঝোল ফুটতে শুরু করলে কাঁচা মরিচ ভেঙে দিতে হবে। ধনিয়া পাতা কুচি দিয়ে নেড়ে দিতে হবে।
লবণ চেখে দেখে ঠিক মনে ঝোল ফুটতে দিতে হবে। তারপর চুলার আঁচ বন্ধ করে এক টেবিল-চামচ সরিষার তেল ঝোলের ওপর ছড়িয়ে দিতে হবে।
সুন্দর একটি বাটিতে আলু যোগে কাতলা মাছের ঝোল ঢেলে ওপরে বাকি বেরেস্তা ছড়িয়ে সাদা ভাত অথবা সুগন্ধি চালের ভাতের সাথে পরিবেশন করা যায়।