পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দিচ্ছে, কিশোরী বা বালিকাদের বিয়ে বন্ধ করা তো যায়ইনি বরং বিভিন্ন সংকটের সময় তা বেড়েছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল তাদের সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশ এখন বাল্যবিবাহে শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয় বরং গোটা এশিয়ায় সবার ওপরে।
এশিয়ায় আমাদের চেয়ে গরিব দেশ আছে; আবার ধর্মীয় গোঁড়ামির অপেক্ষাকৃত মোটা চাদরে ঢাকা দেশও আছে। কিন্তু বাল্যবিবাহের রেকর্ডে আমাদের কেউ টেক্কা দিতে পারছে না। আমরা সবাইকে ছাড়িয়ে গেছি।
জাতীয় চ্যাম্পিয়নের মর্যাদা নিয়েও বাগেরহাটের কিশোরী রাগবি খেলোয়াড়েরাও অসময়ের বিয়ে ঠেকাতে পারেনি। পড়াশোনাও শিকেয় উঠেছে। করোনার ছোবল না এলে হয়তো তারা আরেকটু সময় পেত; কিন্তু বিয়ে ঠেকিয়ে খেলাধুলা আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারত বলে মনে হয় না।
এ রকম একটা বৈরী পরিবেশে কোনো কোনো কিশোরী বিয়ে করতে বাধ্য হলেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার এক অন্য রকম যুদ্ধে নেমেছে। নিজেদের মতো করে চালিয়ে যাচ্ছে সেই যুদ্ধ। বিয়ে ঠেকাতে পারেনি, গর্ভধারণ করতে হয়েছে; তারপরও দাঁতে দাঁত চেপে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষায় বসছে।
করোনার পরে স্কুল খুললে ছাত্রছাত্রীদের মনের খবর জানতে নানা জেলায় গিয়েছি। রংপুরের বদরগঞ্জে এক স্কুলবালিকা বলেছিল, ‘পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার শর্তে বিয়েতে বসেছিলাম; কথার বরখেলাপ হলে ছুটে যাব (তালাক দেব) কিন্তু পড়াশোনা ছাড়ব না।’
মনে হয়েছিল ঝোঁকের মাথায় সে কথাগুলো বলে ফেলেছে। তাদের কথাগুলো ভেবে বলতে বলেছিলাম। পরেরবার কোনো শব্দ বদল না করে একই বয়ান দিয়েছিল তারা। বলেছিল, ছবিসহ নাম–ঠিকানা দিয়েও তাদের কথাগুলো লিখতে পারি। জানিয়েছিল, শ্বশুরবাড়ির লোকের সামনেও কথাগুলো তারা বলতে পারবে।
পড়াশোনায় থাকার সেই অঙ্গীকারের প্রমাণ পরের পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে আমরা পেয়েছি। সবাই পারেনি কিন্তু অনেকেই পেরেছে, পারছে। স্বামীদের মতলব আমাদের জানা নেই। গর্ভধারণের জন্য জোর করা ও উৎসাহিত করার কারণে যে অনেকে আর এগোতে পারেন না, সেটি আমাদের অজানা নয়।