ইন্টারনেটে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অথবা সুনির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকার জন্য নির্ধারিত কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশের জন্যে অনেকেই ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা সংক্ষেপে ভিপিএন ব্যবহার করে থাকেন।
গোপনীয়তা, নিরাপত্তা কিংবা অ্যাক্সেস; যে কাজেই ভিপিএন ব্যবহার করেন না কেন, এটাই একমাত্র বিকল্প নয়। একই কাজের জন্যে আপনি চাইলে ভিপিএনের বাইরেও অন্যান্য পন্থা অবলম্বন করতে পারেন।
ভিপিএন কী করে?
ভিপিএন ব্যবহারের অন্যতম প্রধান কারণ আইপি অ্যাড্রেস লুকিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজিংকে আরও নিরাপদ করা
আইপি অ্যাড্রেস লুকানোর পাশাপাশি ডিভাইসের সঙ্গে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের সংযোগ এনক্রিপ্ট করার মাধ্যমেও ভিপিএন আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে। বিভিন্ন জনপ্রিয় স্ট্রিমিং সেবা, যেমন ডিজনি প্লাস, এইচবিও বাংলাদেশ থেকে দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে ভিপিএনের ব্যবহারে এ প্রতিবন্ধকতা দূর হতে পারে।
তবে ভিপিএন যে একেবারে ত্রুটিহীন, এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই। ভিপিএন-এর সংযোগ অনেকসময়ই স্থিতিশীল থাকে না। আবার অনেক সাইট ভিপিএন ব্যবহারের কারণে আপনাকে চিরতরে ব্লকও করে দিতে পারে। এমনকি কিছু কিছু ভিপিএন তৃতীয় পক্ষের কাছে আপনার ডেটাও বিক্রি করে থাকে।
তাহলে চলুন, দেখে নেওয়া যাক ভিপিএন-এর সেরা ৩টি বিকল্প সম্পর্কে।
১. স্মার্ট ডিএনএস
স্মার্ট ডিএনএসের মাধ্যমে আপনি সাধারণত আপনার অবস্থানে জিও-রেস্ট্রিক্টেড, অর্থাৎ নির্দিষ্ট এলাকায় বন্ধ সাইটগুলোতে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এই সেবা আপনার ডোমেইন নেম সার্ভার বা ডিএনএস ব্যবহার করে এবং একটি প্রক্সি সার্ভারের মতো কাজ করে, যা আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিককে একটি দূরবর্তী সার্ভারের মাধ্যমে রিডাইরেক্ট করে। যার ফলে আপনার আইপি অ্যাড্রেস এবং অবস্থান সাধারণভাবে কোনো তৃতীয় পক্ষ জানতে পারে না।
তবে, একটি প্রক্সি সার্ভার যেমন আপনার ইন্টারনেট ট্র্যাফিকের পুরোটাই রিডাইরেক্ট করে; স্মার্ট ডিএনএস কিন্তু তা করে না। পরিবর্তে এটি যা করে তা হচ্ছে, আপনার বেশিরভাগ ডিএনএস কোয়েরিস এটি এর দূরবর্তী সার্ভারগুলোতে রিডাইরেক্ট করে। তবে, প্রক্সির মতো স্মার্ট ডিএনএস আপনার আইপি অ্যাড্রেসকে সরাসরি লুকাতে পারে না।
২. জিরো ট্রাস্ট নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস (জেডটিএনএ)
জিরো ট্রাস্ট নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস বা জেডটিএনএ, একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মাঝে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে 'ব্রোকারড অ্যাক্সেস' দিয়ে থাকে, যা মূলত সুরক্ষা এবং গোপনীয়তার ওপর জোর দেয়। তবে ব্যবহারকারীরা এখানে কনটেন্ট এবং সফটওয়্যার অ্যাক্সেস করতে চাইলে, তাদের পরিচয় বা কর্মসংস্থান ভেরিফাই করতে হয়।
এ ধরনের প্রযুক্তি মূলত একটি ভিপিএনের মৌলিক সেবাগুলোই দিয়ে থাকে। জেডটিএনএগুলো সাধারণত অনেক ব্যবহারকারীসহ বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশি প্রযোজ্য। এর মাধ্যমে মূলত সাইবার অপরাধীদেরকে নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। এমনকি, কোনো হ্যাকার যদি নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশ করেও ফেলে, ভেরিফিকেশনের অভাবে তারা খুব বেশি সুবিধা করতে পারে না। জেডটিএনএ ব্যাবহারকারীকে একটি এনক্রিপ্টেড টানেলের মাধ্যমে অ্যাক্সেস দেওয়া হয়। যেখানে তাদের আইপি অ্যাড্রেস লুকিয়ে রাখা হয়; ভিপিএন যেমনটি করে থাকে।
৩. প্রক্সি সার্ভার
ভিপিএন-এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার আগে, ইন্টারনেটে আইপি অ্যাড্রেস লুকিয়ে রাখতে এবং অনলাইনে নিরাপদ থাকার জন্যে ব্যবহারকারীরা মূলত প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করতেন।
প্রক্সি সার্ভার আপনার এবং ইন্টারনেটের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বা গেটওয়ে হিসাবে কাজ করে। প্রক্সি সার্ভারের নিজস্ব আইপি থাকে, যেগুলো আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক গ্রহণ করে। অর্থাৎ আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও এ সংক্রান্ত সকল কাজ এই মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমেই হবে। ফলে কেউ যদি আপনার আইপি খোঁজার চেষ্টা করে, তবে তারা শুধুমাত্র প্রক্সি সার্ভারের আইপি অ্যাড্রেস খুঁজে পাবে।