একটি তামাক কোম্পানিতে কাজ করতেন মোখলেছুর রহমান গাজী। চাকরির শর্ত অনুযায়ী স্থায়ীকরণ চেয়ে না পেয়ে ২০১৩ সালে শ্রম আদালতের দ্বারস্থ হন। এরপর কেটে যায় সাড়ে ৯ বছর। রায় না হওয়ায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন তিনি। তাঁর আইনজীবী শারমিন সুলতানা মৌসুমী আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিকার না পেয়ে মোখলেছুর হতাশ হয়ে পড়েন। লড়াই করার আগ্রহ হারিয়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেন।
নিজের অধিকার ও ন্যায্য পাওনা পেতে এবং অন্যায়ের প্রতিকারের আশায় মোখলেছুরের মতো অসংখ্য শ্রমিক মামলা করেন শ্রম আদালতে। আইনে ১৫০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির কথা থাকলেও বছরের পর বছর মামলা ঝুলতে থাকে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১০টি শ্রম আদালতে ২৫ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। শ্রমিক অধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, মামলার তুলনায় আদালতের সংখ্যা কম হওয়া, জনবল সংকট ও আইনের দুর্বলতার কারণে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে। এতে বিচারপ্রার্থীদের দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
মামলা করে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক নাজমুল শেখও। তিনি রাজধানীর মালিবাগের একটি সোয়েটার কারখানায় ২০০০ সাল থেকে চাকরি করতেন। ২০১৮ সালে পাওনা না মিটিয়ে বিনা নোটিশে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তিনি ঢাকার শ্রম আদালতে মামলা করেন। তবে এখনো ওই মামলার রায় হয়নি। চাকরি হারানোর পর তিন মাস বেকার থেকে চাকরি নেন ময়মনসিংহের একটি পোশাক কারখানায়। সেখানে শ্রমিকদের
বেতন-বোনাস নিয়ম অনুযায়ী দেওয়া হতো না। আজকের পত্রিকাকে নাজমুল বলেন, ‘১৮ বছর এক জায়গায় কাজ করার পরও চাকরি হারাইলাম। কোনো টাকা পাইলাম না। মামলা করলেও রায় হয় নাই। পরে যেখানে কাজ নিলাম, সেইখানেও অন্যায়। কিন্তু আর মামলায় যাই নাই। নিজের খরচই চালাইবার পারি না। মামলার খরচ চালামু কেমনে।’
শ্রমিক অধিকার কর্মীরা বলছেন, মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে শ্রমিকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। দেশে কোনো আইন আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। এ ছাড়া আইনে যতটুকু বলা আছে, সেটাও শ্রমিকেরা পাচ্ছেন না।