প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সরকারের আমন্ত্রণে ২৫ এপ্রিল চার দিনের সফরে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। জাপান সফর শেষে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে তিনি ওয়াশিংটনে যাবেন। সেখান থেকে কমনওয়েলথ দেশের রাজা তৃতীয় চার্লস ও তাঁর পত্নী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য লন্ডনে যাবেন। তিন দেশে তাঁর এই সফর ১৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আগামী ৯ মে তিনি দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার এই মেয়াদের প্রায় শেষ সময়ে এসে তাঁর এই তিন দেশে সফরটি বাংলাদেশের সঙ্গে জাপান, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও কমনওয়েলথের সম্পর্ক সহযোগিতার সক্ষমতার নতুন উচ্চতার সাক্ষ্য দিচ্ছে।
স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিবেচনায় তাঁর এই তিন দেশের সফরের মধ্যে জাপানের সফরই সবচেয়ে বেশি তাৎপর্য বহন করছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার কার্যালয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কৃষি, শুল্কবিষয়ক, প্রতিরক্ষা, আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা, শিল্প আপগ্রেডিং, বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদ, জাহাজ পুনর্ব্যবহার এবং মেট্রোরেল বিষয়ে আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন উন্নয়ন-সহযোগীর প্রধানদের সঙ্গেও তাঁর অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘ব্যাপক অংশীদারত্ব’ থেকে সফলভাবে ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিভিন্ন আলোচনায় দুই দেশের অর্থনৈতিক, ভূরাজনৈতিক এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এ সম্পর্কে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা গত মার্চ মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স’-এর বৈঠকে পরিষ্কার বলেছেন, ‘বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল আর উত্তর-পূর্ব ভারতের শিল্পোন্নয়নে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে একটা যৌথ অর্থনৈতিক পথনির্দেশিকা তৈরি করা হবে।’ জাপানের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দাই সুকে সিনতানি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘গোটা জাপান এখন তাকিয়ে রয়েছে শেখ হাসিনার এই সফরের দিকে।’ এ ছাড়া ওয়াশিংটন উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন-সহযোগী জাপান দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত, যে কারণে তারা প্রায় পাঁচ বছর আগে সেখানে একটি বন্দর উন্নয়নের কাজ শুরু করে।’ জাপানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরটি এই সব বিবেচনা থেকে সব আন্তর্জাতিক মহলকেই বেশ গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতে দেখা গেছে, যা সচরাচর অন্য অনেক দেশের ক্ষেত্রেই খুব একটা দেখা যায় না।