রাসায়নিক রং চুলকে শুষ্ক ও প্রাণহীন করে তুলতে পারে। আর মেহেদি পাতার পাউডার চুলকে প্রাকৃতিকভাবে রঙিন করে তোলে চুলের উজ্জ্বলতা কমানোর ঝুঁকি ছাড়াই। এটি চুল রং করার পাশাপাশি চুল ঘন করতে এবং মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও কাজ করে।
হেনা বা মেহেদি ভারতীয় উপমহাদেশে যুগ যুগ ধরে তার ঔষধি উপকারিতার জন্য পরিচিত। একইসঙ্গে বডি আর্টে ব্যবহারের জন্যও জনপ্রিয়। প্রাচীন মিশরের ১৯তম রাজবংশের ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস ছিলেন এর প্রথম দিকের ব্যবহারকারীদের একজন। তিনি তার পাকা চুল ঢেকে রাখার জন্য মেহেদি ব্যবহার করতেন। এর অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপকারিতা এবং তাৎক্ষণিক শীতল করার বৈশিষ্ট্যগুলো ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে এবং মাথার ত্বকের ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
মেহেদির রং গাঢ় কমলা থেকে মেরুন হয়ে থাকে। চুলে কেমন রং আসবে তা নির্ভর করে পাতার ধরন এবং চুলে কীভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে তার ওপর।
মেহেদি কীভাবে ব্যবহার করবেন
মসৃণ মেহেদি পেস্ট তৈরি করতে প্রয়োজনীয় সব উপাদান সংগ্রহ করুন। এর মধ্যে রয়েছে ১ থেকে ২ টেবিল চামচ কালো চা পাতা, ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ মেহেদি পাউডার, ২ থেকে ৩ কাপ পানি, ১/২ চা চামচ লেবুর রস, একটি ব্রাশ, মিশ্রণ তৈরি করার বাটি এবং একটি পুরনো টি-শার্ট, যা নোংরা হলেও সমস্যা হবে না।
চা পাতা পানিতে দিয়ে ততক্ষণ জ্বাল দিন যতক্ষণ না বুদবুদ হওয়া শুরু করে। তারপর এটি কম আঁচে রেখে দিন এবং পানি অর্ধেক কমিয়ে নিন। মেহেদির জন্য পর্যাপ্ত পানি যেন থাকে সেটাও নিশ্চিত করুন। প্যাকেটজাত মেহেদির চেয়ে প্রাকৃতিকভাবে গুঁড়ো করে নেওয়া মেহেদি ব্যবহার করা ভালো।
মেহেদির গুঁড়ো সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পেস্ট তৈরি করে নিন। এতে কালো চা এবং লেবুর রস মিশিয়ে নিন। আমলা পাউডার এবং কফির মতো অন্যান্য ভেষজ উপাদান যোগ করতে পারেন। তাতে চুল আরও পুষ্টি পাবে, মজবুত হবে এবং রংও ভালো আসবে।
ব্যবহারবিধি
দাগ এড়াতে এবং চুল ভাগ করে নিতে একটি পুরনো টি-শার্ট পরে নিন। গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত চুলের প্রতিটি অংশ ঢেকে রাখতে হাতে গ্লাভস ব্যবহার করুন এবং চুল ঠিক রাখার জন্য শাওয়ার ক্যাপ পরুন। আধা ঘণ্টা রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
যেদিন মেহেদি দেবেন সেদিন চুল শ্যাম্পু করা থেকে বিরত থাকুন। তবে ভালোমতো কন্ডিশন করুন। পরের দিন চুলে শ্যাম্পু করতে পারেন। মেহেদি মাসে ১ বার বা ২ বার চুলে দিতে পারেন।
অতিরিক্ত সতর্কতা ও টিপস
- মাথার ত্বকে যদি কোনো সমস্যা থাকে, কোনো এলার্জি বা চর্মরোগ থাকে তবে চুলে মেহেদি দেবেন না।
- আপনার যদি ঠান্ডাজনিত সমস্যা থাকে তবে মেহেদি এড়িয়ে চলুন। এর শীতল প্রভাব ঠান্ডার সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- মেহেদি ব্যবহার করার আগে চুল ভালোমতো ছাড়িয়ে নিন। কারণ মেহেদি চুলে জট সৃষ্টি করতে পারে।
- মেহেদি পেস্ট করার সময় ধাতব বাটি এড়িয়ে চলুন। কারণ এর উপাদানগুলোর জন্য ধাতব বাটির সঙ্গে বিক্রিয়া করতে পারে। কাঁচের বাটিতে পুরো মিশ্রণটি তৈরি করে নিন।
- কপালে কিংবা মাথার তালুতে মেহেদির দাগ এড়াতে চুলের লাইনে পেট্রোলিয়াম জেলির কোট লাগিয়ে নিন।
মেহেদি পেস্টকে চুলে সম্পূর্ণ শুকাতে দেবেন না। এতে চুলে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে।