ইতিহাসের খলনায়ক, পলাশীর অভিনেতারা, তারা কি ছিল বাঙালির আত্মার আত্মীয়? অবাঙালি শিয়া মুসলমান মীর জাফর, অবাঙালি জৈনধর্মী জগৎ শেঠ এবং অবাঙালি হিন্দু রাজবল্লভ কোন দোষে ভাবতে যাবে বাঙালির সুখ-দুঃখের কথা? ব্যক্তিস্বার্থের বাইরে সমষ্টিগত স্বার্থকে ওরা চেনে না। তাদেরই তো উত্তরসূরি আজকের বাংলাদেশের শাসকশ্রেণির রাজনীতিক এবং প্রশাসনিক আমলার দল, যারা দেশের স্বার্থ বিকিয়ে বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চায় তেল-গ্যাসসহ সামুদ্রিক বন্দর। সেদিন যেমনি সামনে ছিল ক্লাইভ আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, পেছনে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ, আজকেও তেল-গ্যাস প্রশ্নে সামনে বিদেশি ব্যবসায়ী শ্রেণি, পেছনে-আড়ালে রয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ।
একাত্তরের যুদ্ধ, এত বড় জাতীয় বিপর্যয়, দুঃখ-কষ্ট, তারপরও যদি জাতীয় দায়িত্ব সম্পর্কে বাঙালি এতটা উদাসীন হয়ে থাকল, তবে তার ভবিষ্যৎ কি? পলাশী যুগের আমলাতন্ত্র আর আজকের আমলাতন্ত্রের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদ কি কোনো পার্থক্য খুঁজে পায়? পায় না। সেদিনের বাংলার মসনদের পাশে যে মীর জাফর আর জগৎ শেঠরা ছিল, আজও তো তারাই আছে। সেই আমলাতন্ত্র তথা অমাত্যশ্রেণিকে সাম্রাজ্যবাদ ভালো করেই চেনে-জানে। বাঙালি সম্পর্কেও তাদের জানাজানি বাকি থাকেনি। সেদিন বাংলার ঘাটে ঘাটে তরী ভিড়িয়ে নগরে-বন্দরে গাঁয়ে-গঞ্জে বাণিজ্য করতে গিয়ে বাঙালির দুর্বলতার জায়গাটি তারা জেনে যায়। ইংরেজ বণিকরা দেখতে পায় বাঙালি কূপমন্ডুক এক জাতি। আপন গ্রামের বাইরের জগৎ সম্পর্কে সে কিছুই জানে না। গ্রামান্তরেও যায় না। চেনে না সমুদ্র, জানে না জাহাজ কী বস্তু, তার আছে কাঠের ডিঙি নৌকা, তালগাছের ভেলা। ওরা চেনে কেবল কৃষিভূমি আর ফসল।