জীবনে দুর্ঘটনা বলে কিছু নেই। যা ঘটেছে তা এজন্যই ঘটেছে যে কার্যকারণ সমীকরণ মোতাবেক সেটা ছাড়া আর কিছুই ঘটতে পারত না। কয়েক দশক আগে গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশগুলো যাত্রা শুরু করেছিল ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে, যেমন জিন্নাহর পাকিস্তান, নাসেরের মিশর, মোসাদ্দেকের ইরান, সুকর্ণর ইন্দোনেশিয়া, পরে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। তুরস্ক তো ১০০ বছর আগে থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু এখন ওই সব দেশের প্রত্যেকটিতে ধর্মনিরপেক্ষতাবিরোধী শারীয়াপন্থীরা শক্তিশালী। এ বিবর্তনের কারণগুলো বাংলাদেশেও বিদ্যমান, বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ কিছুটা হলেও সেদিকে এগিয়েছে বলে PEW রিসার্চ ইত্যাদি থেকে জানা যায়। তাঁদের ‘ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা’র যুদ্ধে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনেকগুলো ফ্রন্টের একটা।
তাঁদের দাবি ‘মঙ্গল’ শব্দটা এবং শোভাযাত্রার কিছু মুখোশ হিন্দুয়ানী, কাজেই ওগুলোর ব্যবহার আমাদেরকে ‘ইসলাম-ভ্রষ্ট করার সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র’। এগুলো তাঁরা কোন গবেষণায় পেয়েছেন এবং মুখোশের কারণে কয়জন মুসলিম ইসলাম-ভ্রষ্ট হয়েছে এগুলো সবাইকে জানানো তাঁদের নাগরিক কর্তব্য। প্রমাণ পেলে সরকারও পদক্ষেপ নেবে নিশ্চয়ই, আমরাও ঐক্যবদ্ধভাবে সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করব। তাঁরা প্রমাণ দিতে না পারলে প্রমাণ হবে তাঁরা আমাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছেন, যা অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনা দরকার।
মুখোশ-বিরোধী পক্ষের কাউকে কখনো একুশের বা নববর্ষের মিছিলে দেখেছেন? শোভাযাত্রার আয়োজকেরা আগামী বছর শোভাযাত্রায় মুখোশ ব্যবহার করবেন না ঘোষণা দিয়ে দেখতে পারেন, মুখোশবিহীন শোভাযাত্রায় তাঁরা যোগ দেন কিনা। এতে প্রমাণ হয়ে যাবে আসলে তাঁদের গাত্রদাহ প্রাণী-চেহারার মুখোশের বিষয়ে, নাকি অন্য কিছু? মুখোশের ‘যুক্তি’টা আসলে বাহানা, যা তাঁদের করতে হয় অন্য উদ্দেশ্যে। সেটা কি?