বাসার কাজের মহিলা ফাহিমা আসন্ন ঈদের পর গ্রামের বাড়িতে যাবে, সে আর ফিরে আসবে না। তার স্বামী মাটি কাটার কাজ করে। সেও ফিরে আসবে না। কারণ হিসেবে বলেছে তাদের পোষায় না। দুজনে যা ইনকাম করে তা দিয়ে চার বাচ্চাসহ সংসার চলে না। কিন্তু গ্রামে কি তাদের কোনো কাজ আছে? স্বামীটি হয় তো কৃষিকাজ করে রোজগার করতে পারবে। কিন্তু তাতে কি ওই সংসার চলবে?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সম্প্রতি জরিপ করেছে গ্রামের গরিব মানুষের আয় ও ব্যয় নিয়ে। প্রতিষ্ঠানটি কয়েক বছর পর পর এ জরিপ গবেষণা করে। ওই জরিপ গবেষণা থেকে আমরা এমন কিছু তথ্য পাবো যা দেশের গরিব মানুষের প্রকৃত চেহারা দেখতে পাওয়া যাবে। বিবিএস’র ‘খানা আয় ও ব্যয়’ সম্পর্কিত প্রতিবেদনের তথ্য দেওয়া যাক।
গ্রামের মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। সেখানে একটি পরিবারে প্রতি মাসে গড়ে ২৬ হাজার ১৬৩ টাকা আয় করে। অথচ ব্যয় হয় গড়ে ২৬ হাজার ৮৪২ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পরিবারে মাসে যা আয় করে তার চেয়ে ব্যয় বেশি হয় ৬৬৯ টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপে গ্রামের এই চিত্র উঠে এসেছে। গত বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। (সমকাল/এপ্রিল ১৪, ২০২৩) এর আগে ২০১৬ ও ২০১০-এ বিবিএস এই খানা জরিপ করেছিল। ওই দুই সনের গরিব পরিবারের আয় ব্যয়ের হিসাবটাও দেখে নেওয়া জরুরি। তাহলে গ্রামের গরিব পরিবারের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।
বিবিএসের বিগত খানা আয়-ব্যয় জরিপ বিশ্লেষণেও গ্রামীণ পরিবারে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ২০১৬ সালের জরিপে গ্রামীণ পরিবারে মাসিক আয় ছিল ১৩ হাজার ৮৬৮ টাকা। ওই সময়ে ব্যয় ছিল ১৪ হাজার ১৫৬ টাকা। অর্থাৎ ওই সময়ে মাসিক আয়ের চেয়ে ব্যয় ২৮৮ টাকা বেশি ছিল। এবারের জরিপে পরিবারের গড় সদস্য সংখ্যা পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ২৬ জন। (সমকাল/১৪ এপ্রিল,২৩)
এই জরিপ সরকারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের। ফলে এই জরিপ গবেষণা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়ার কথা নয়। আমরা সেটা করছি না। প্রশ্নটি এখানেই যে গাঁয়ের মানুষের মাসিক আয় গড়ে ২৬ হাজার ১৬৩ টাকা হলে ওই জরিপের নিম্নআয়ের মানুষের মাসিক আয় কতো? এটা তো গড় আয়। গড় আয়ের উচ্চস্তরটি কতো? আর নিম্নআয়ের স্তরটি কতো?