মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতা– বড় ষড়যন্ত্রের ছোট প্রকাশ

বিডি নিউজ ২৪ চিররঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ২০:২৫

পহেলা বৈশাখের সঙ্গে মঙ্গল শোভাযাত্রার সংযুক্তি খুব বেশি দিনের নয়। তবে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতার নামে আবারও একদল মানুষ বাঙালি সংস্কৃতির বৃহত্তম অসাম্প্রদায়িক সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসবটিকে বিঘ্নিত করতে মাঠে নেমেছে। কেন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে আইনি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি প্রদানকারী আইনজীবীটি জ্ঞাতনামা হলেও হুমকি দিয়েছে অজ্ঞাতনামা কেউ বা কেউ কেউ। মঙ্গল শোভাযাত্রার এই বিরোধিতা আসলে একটা বড় ষড়যন্ত্রের অংশ, প্রকাশটা আপাতত ছোট মনে হলেও।


আধুনিক শৈল্পিক রূপ না থাকলেও শত শত বছর ধরে বাঙালি পহেলা বৈশাখে গ্রামেগঞ্জে বৈশাখী মেলা করে আসছে। ব্যবসায়ীরা হালখাতা করছেন। হিন্দু ব্যবসায়ী পূজাঅর্চনা করে মিষ্টি বিতরণের মাধ্যমে হালখাতার সূচনা করেন আর মুসলমান ব্যবসায়ী মিলাদ পড়িয়ে করেন মিষ্টি বিতরণ। আদিবাসীরা নিজস্ব প্রথামাফিক নানা অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন। এর মধ্যে ধর্মের প্রভাব খুব অল্পই। পুরোটাই লোকজ উৎসব। এ কারণে শত বছর ধরে ধর্মীয় চিন্তাবিদরা নববর্ষ উদযাপনে ধর্মকে টেনে এনে নিজেদের সংকীর্ণ মনোভাব বা মতলবি বয়ান দেননি। কিন্তু সম্প্রতি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সামনে রেখে নিজেদের আলোর সামনে উপস্থাপন করার জন্য পুরনো অন্ধকার পথ ধরে কোনো কোনো মহল হামলে পড়েছে নববর্ষ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে।


যুগ যুগ ধরে মতলববাজরা ধর্মের ধুয়ো তুলে মানুষের স্বাভাবিক ও নান্দনিক জীবনযাত্রাকে জটিল করে তুলেছে। ধর্মের মঞ্চে নায়ক হতে চেয়েছে। পাকিস্তান আমলে বাঙালির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল তদানীন্তন ক্ষমতাসীন মহল। পাকিস্তানি সামরিকজান্তা আইয়ুব খান ১৯৬৭ সালে পহেলা বৈশাখ পালনকে হিন্দু সংস্কৃতির প্রভাব বলে আখ্যা দেন। কারণ ক্ষমতাসীনরা দেখতে পায়, এই উৎসব ক্রমে বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হচ্ছে, এর প্রভাবে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক এই ঐক্যকে তারা ভয় পায়। তাই তো তারা ধর্মের হাতিয়ার নিয়ে মাঠে নামে। যেহেতু তখন পুরো পাকিস্তানে ইসলাম ধর্মের মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, তাই কৌশলে পহেলা বৈশাখ পালনকে হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে মুসলমানদের তা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন। তারা ভেবেছিল এর ফলে হিন্দু-মুসলিম বিরোধ সৃষ্টি হবে আর তারা ওই ফায়দা লুটবে। মূলত আইয়ুব খানের এমন ঘোষণা ছিল বাঙালি জাতির শত বছরের সংস্কৃতির মূলে কুঠারঘাত।


ভাষা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ধর্মের বিকৃত ব্যবহার শুরু করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। বলা হলো ‘বাংলা’ হিন্দুর ভাষা আর ‘উর্দু’ মুসলমানের। একইভাবে একাত্তরে গণহত্যার সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের মগজধোলাই করে জানানো হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষরা কাফের। এদের খতম করা ইমানি দায়িত্ব।


এরও আগে ১৯৪৯ সালে বাংলা বর্ণমালা সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর কারণ হিসেবে দেখানো হয় যে, বাংলা বর্ণমালায় কিছু সংস্কৃত বর্ণ আছে যেগুলো হিন্দুরা ব্যবহার করে। তাই বাংলাকে সংস্কৃতমুক্ত তথা পবিত্র করার লক্ষ্যে এ ভাষার বর্ণমালার সংস্কারের প্রয়োজন। সচেতন বাঙালিরা আইয়ুব সরকারের ফাঁদে পা দেয়নি। তারা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। এই পদক্ষেপ ব্যর্থ হলে আইয়ুব খান ১৯৫৯ সালে রোমান হরফে বাংলা ও উর্দু লেখার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং একটি কমিটি গঠন করেন। তা ব্যর্থ হলে, ১৯৬৮ সালে আবার রোমান হরফে বাংলা লেখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালনের অপরাধে সরকার ১৯৬৬ সালে প্রগতিশীল ‘দৈনিক ইত্তেফাক’সহ বেশ কিছু প্রকাশনা নিষিদ্ধ ষোষণা করে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us