শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি উক্তি নিয়ে সমকালের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করার ফলে পক্ষে যাঁরা বলেছেন, তাঁরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছেন বিপক্ষের প্রায় সবাই প্রাসঙ্গিকতা ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথে এগিয়ে গেছেন। সেই ব্যক্তিগত আক্রমণের সঙ্গে আমার বক্তব্যের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই।
অধিকাংশই ভিত্তিহীন এবং প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। দুটি দৈনিক পত্রিকায় উপসম্পাদকীয়তে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিস্তারিতভাবে লিখেছেন। তাঁদের লেখা ও সমর্থনে অনেকেই নতুন নতুন বিষয় যোগ করেছেন। এর মধ্যে একদল সমর্থক বলতে শুরু করেছেন, বিষয়টিকে এড়িয়ে গেলেই ভালো হতো। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, সস্তা বিনোদন এখন সময়ের দাবি। শিল্প-সাহিত্য পড়ে বা কোনো বিষয়ের গভীরে গিয়ে বিনোদন পাওয়া মানুষ দারুণভাবে কম। চিন্তাহীন একেবারে স্থূল বিনোদনে ব্যাপকসংখ্যক দর্শক বিশ্বাস করে। যে কারণে দেখা যায় মননসমৃদ্ধ কাব্য, সাহিত্য, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র এসবের আবেদনও কমে যাচ্ছে। আর যাঁরা স্থূল বিনোদন সৃষ্টি করেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ভিউ, লাইক, কমেন্টস ইত্যাদি। কাজেই ওই নামগুলো উচ্চারিত হলে তাঁদের ভিউ বেড়ে যাবে এবং টাকা আসতে থাকবে। তাই এসব ব্যাপার বা ব্যক্তিকে এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এই পথ অনুসরণ করে অনেক বুদ্ধিজীবী এবং সুরুচিবান মানুষ মুখ খোলেননি এবং এটিকে তাঁরা কোনো আলোচনার বিষয় বলেও মনে করেন না। বিপরীত দিকে যাঁরা সোচ্চার হয়েছেন, তাঁরা বিষয়টির সত্যতা বিবেচনা করেই যৌক্তিক আলোচনার পথ ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন। ফেসবুক এ ধরনের আক্রমণের জন্য অত্যন্ত চমৎকার ব্যবস্থা। যখন খুশি যাকে-তাকে নিয়ে ইচ্ছেমতো মিথ্যাচার করা যায়। তাঁদের মধ্যে অনেক তথাকথিত শিক্ষিত লোকও আছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও আছেন। আর আছেন নিরাপদে বসবাসকারী কিছু প্রবাসী। নিজেদের সম্পর্কে অনেক মিথ্যা পরিচয় দিয়ে যাঁরা অ্যাসাইলাম পেয়েছেন। তাঁদের কোনো লোকলজ্জার ভয়ও নেই। একটা মন্তব্য ছুড়ে দেওয়ার পর যখন চারদিক থেকে প্রতিবাদ আসে, তখন তাঁরা নিজেদের ফেসবুক আইডি, পেজ বন্ধ করে দিয়ে চুপচাপ থাকেন। আবার সুযোগ বুঝে দুটো কথা বলে ছিনতাইকারীর মতো পালিয়ে যান।
প্রশ্ন উঠেছে—জনপরিচিতি আর জনপ্রিয়তা কি এক? চুরি করে, ডাকাতি করে বা একটা ঘৃণ্য কাজ করে কেউ কেউ পরিচিতি লাভ করতে পারে। সেই পরিচিতি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ভালো কাজ করে জনপ্রিয় হওয়া কঠিন। কারণ, তার সঙ্গে থাকে জনগণের গ্রহণযোগ্যতা, শিল্পের উৎকর্ষ এবং থাকে ঈর্ষা। আমার এক বন্ধু একটি ফারসি বয়েতের কথা প্রায়ই বলে থাকেন—যখন ভালো কাজের জন্য সুখ্যাতি আসে, তখন বন্ধুরা শীতের পাতার মতো ঝরে যায় আর শত্রুরা বসন্তের পাতার মতো গজাতে থাকে।
এ ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। যাঁরা এই সব কর্মের সমঝদার, তাঁরা নিজেরা এসব দেখেন না, নিজের ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে কখনো দেখার জন্য পাঠানও না। কিন্তু ওই দুষ্কর্মের পক্ষে সাফাই গেয়ে নিজেকে জাহির করতে চান।