জাকাত একটি নির্ধারিত ফরজ ইবাদত। জাকাত গরিবের পাওনা বা অধিকার, এটি করুণার দান নয়।
সঠিকভাবে জাকাত দিলে সমাজ, দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র এবং বিশ্ব দারিদ্র্যমুক্ত হবে। জাকাত দারিদ্র্য বিমোচন করে ও সম্পদের প্রবাহ তৈরি করে। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘যাতে তোমাদের বিত্তবানদের মাঝেই শুধু সম্পদ আবর্তন না করে।’ (সুরা-৫৯ হাশর, আয়াত: ৭)।
জাকাত, সদকাতুল ফিতর, ফিদিয়া, কাফফারা ও মান্নত ব্যয়ের খাতসমূহ
কোরআন মজিদে জাকাত ব্যয়ের নির্দিষ্ট আটটি খাত উল্লেখ রয়েছে। সদকাতুল ফিতর, ওয়াজিব সদাকাত, ফিদিয়া, কাফফারা ও মান্নত ব্যয়ের খাতও এগুলো। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মূলত সদকা হলো ফকির, মিসকিন, জাকাতকর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে (ইসলামের সুরক্ষার জন্য) ও বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফির ও পথসন্তানদের জন্য। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী ও পরম কৌশলী।’ (সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ৬০)
ওই আটটি খাতের মধ্যে সময়ের প্রয়োজন ও ফলাফল বিবেচনা করে নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী ও অন্য ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এতে জাকাত–ফিতরা আদায় হওয়ার পাশাপাশি নিয়ত অনুযায়ী ক্ষেত্রবিশেষে সওয়াবের পরিমাণও বাড়বে। উপকার যত ব্যাপক হবে, সওয়াব তত বেশি হবে। যেমন দ্বীনি ইলম অর্জনে দরিদ্র তালেবে এলেম বা আলেমকে জাকাত প্রদান করলে তিনি একদিকে দরিদ্র ব্যক্তি হিসেবে অন্য যেকোনো ব্যক্তির মতো উপকৃত হবেন, উপরন্তু এ অতিরিক্ত উপকারের জন্য অধিক সওয়াব পাবেন। যেমন দ্বীনি ইলম অর্জনে ও ধর্মীয় কাজে সহযোগিতা ইত্যাদি।
জাকাত ও সদকা যাদের দেওয়া যায় না
যাঁদের জাকাত, সদকাতুল ফিতর, ওয়াজিব সদাকাত, ফিদিয়া, কাফফারা ও মান্নত দেওয়া যায় না, তাঁরা হলেন মা–বাবা ও ঊর্ধ্বতন পুরুষ যেমন দাদা-দাদি ও নানা-নানি। ছেলে-মেয়ে ও অধঃসন্তান পুরুষ যেমন নাতি-নাতনি। স্ত্রী, কারণ, তাঁর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান স্বামীর দায়িত্বে। সায়্যদ, অর্থাৎ হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রকৃত বংশধর। ধনী লোক, যাঁরা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এবং অমুসলিম ব্যক্তি।
যাঁদের জাকাত ও সদকা দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব হয়
আপন ভাইবোন, ভাগনে–ভাগনি, ভাতিজা–ভাতিজি, চাচা–জেঠা–ফুফু, মামা–খালা; চাচাতো–জেঠাতো ভাইবোন, ফুফাতো ভাইবোন, মামাতো–খালাতো ভাইবোন এবং অন্য নিকটাত্মীয় যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হন, তাহলে তাঁদেরও জাকাত, সদকাতুল ফিতর, ওয়াজিব সদাকাত, ফিদিয়া, কাফফারা ও মান্নত দেওয়া যাবে; বরং তঁাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। হাদিস শরিফে রয়েছে নিকটাত্মীয়দের দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব হয়—প্রথমত, দানের সওয়াব; দ্বিতীয়ত, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার সওয়াব।
জাকাত ও সদকায় যাঁদের অগ্রাধিকার
এ প্রসঙ্গে কোরআনুল কারিমে ঘোষণা হয়েছে, ‘এমন অভাবী লোক যারা আল্লাহর পথে নিজেদের নিয়োজিত রাখার কারণে (উপার্জনের জন্য) দুনিয়া চষে বেড়াতে পারে না। সম্ভ্রম ও আত্মমর্যাদার কারণে অনভিজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবহীন মনে করে। আপনি তাদের চিহ্ন দেখে চিনতে পারবেন। তারা মানুষের কাছে নির্লজ্জভাবে ভিক্ষা করে না। আর তোমরা যেকোনো উত্তম জিনিস ব্যয় করো, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সে বিষয়ে অবগত আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৭৩)
যেভাবে দিতে হবে জাকাত ও ফিতরা
প্রথমে যথাসম্ভব নিশ্চিত হতে হবে যাঁকে দেওয়া হচ্ছে, তিনি এর উপযুক্ত হকদার কি না। জাকাত, সদকা ও ফিতরা দেওয়ার সময় গ্রহীতাকে তা জানানোর প্রয়োজন নেই। জাকাতগ্রহীতা যদি আত্মীয়স্বজন, আপনজন বা পরিচিত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি হন, তাহলে জাকাত উল্লেখ করা মোটেই সমীচীন নয়।
কারণ, এতে গ্রহীতা অপমানিত, অসম্মানিত ও বিব্রত বোধ করতে পারেন। অকারণে কাউকে অসম্মান করা বা কারও সম্মানহানি করা গুনাহের কাজ। কোরআনের ভাষায় আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সম্মান আল্লাহর জন্য, সম্মান রাসুল (সা.)–এর জন্য, সম্মান সকল মুমিনের জন্য; কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না।’ (সুরা-৬৩ মুনাফিকুন, আয়াত: ৮)।