পীরগঞ্জের আনিসুল ইসলামের আট বছরের বিমার প্রিমিয়ামের টাকা নিয়ে লাপাত্তা এজেন্ট মহসিন হোসেন আকন্দ। তার মতো একইরকম ভুক্তভোগী বরিশালের সাদেকুজ্জামান। তার ৬ বছরের টাকা নিয়ে উধাও এজেন্ট খুরশিদ আলম। ঠিক এমনি আরেক ভুক্তভোগী খুলনার রেহানা আক্তার। তার ৭ বছরের টাকা আত্মসাৎ করেছেন এজেন্ট রিপন মিয়া। এরা সবাই কোম্পানির নামে ভুয়া রশিদে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করেছে।
আনিসুল ইসলামের ছেলে সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবার অবসরের টাকা দিয়ে জীবন বিমা কোম্পানিতে একটি বিমা করা হয়। বিমা কোম্পানির এজেন্ট ছিলেন খুবই চতুর লোক। প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর আমাদের বাড়িতে এসে প্রিমিয়ামের ৪ হাজার টাকা নিয়ে যেতেন। আর মাছ-মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে যেতেন। এভাবে নয় বছর তিনি প্রিমিয়ামের ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। এরপর হঠাৎ উধাও, আর আসেন না। পরে জীবন বিমা কোম্পানির শাখায় খোঁজ নিয়ে দেখি এজেন্ট মাত্র ১ বছরের প্রিমিয়ামের ১৬ হাজার টাকা জমা দিয়েছে। বাকি ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা মেরে দিয়ে এলাকা ছেড়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি বলেছিল নোয়াখালী কিন্তু সেই ঠিকানায় এমন কোনো ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়নি।
একই রকম অভিযোগ করেছেন বরিশালের গ্রাহক সাদেকুজ্জামান ও খুলনার রেহানা আক্তার। তারা এজেন্টের খোঁজ পেয়েছেন কিন্তু ততদিনে এজেন্ট টাকা নিয়ে বিদেশ চলে যান। তাদের বিমাও তামাদি হয়ে গেছে।
আনিসুল, সাদেক এবং রেহানার মতো হাজার হাজার গ্রাহকের টাকা কোম্পানিতে না জমা দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন এজেন্টরা। আবার যে এজেন্টরা জমা দিচ্ছেন তারাও সময় মতো দিচ্ছেন না। নিয়ম ভঙ্গ করে প্রিমিয়ামের ওপর থেকে কমিশনের টাকা নিয়ে তারপর জমা দিচ্ছেন।
এসব কারণে বিমা কোম্পানি ও গ্রাহক উভয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিমা খাত প্রতিনিয়তই আস্থা হারাচ্ছে। অপরদিকে তামাদি বিমা সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই আত্মসাৎ ও অনিয়ম রোধে বিমা এজেন্টদের নগদ টাকা দেওয়া নিষিদ্ধ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। ইতোমধ্যে এই বিধান রেখে বিমা প্রবিধান করেছেন আইডিআরএ, এখন তা বাস্তবায়ন হচ্ছে।
আইডিআরএ প্রিমিয়ামের অর্থ এজেন্টের পরিবর্তে গ্রাহকদের নিজেই জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আর বিমা কোম্পানিগুলোকে ভোগান্তি ছাড়াই ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিমার টাকা জমা দেওয়া নির্দেশনা দিয়েছে। বিমা কোম্পানিগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং যেমন- বিকাশ, নগদ এবং রকেটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রিমিয়াম নেওয়া শুরু করেছে।
নতুন এই আইনকে স্বাগত জানিয়েছে বিমা কোম্পানিগুলো। আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিমা কোম্পানির প্রাণ হচ্ছে এজেন্ট। বিশেষ করে জীবন বিমা কোম্পানির পলিসি মূলত এজেন্টরা বিক্রি করেন। এই পলিসি বিক্রি করতে গিয়ে এজেন্টরা বিমা খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। বিমা কোম্পানির অভিযোগ, এজেন্টরা গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমা দিচ্ছে না। আবার যে এজেন্টরা জমা দেন তারা নিজের কমিশন রেখে বাকি অর্থ কোম্পানিতে জমা দেন; যা সম্পূর্ণ আইনের লঙ্ঘন।