ডিজিটাল আইন জামিনযোগ্য হলে অপপ্রয়োগ কমবে

সমকাল নিজামুল হক নাসিম প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০২:০১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের মাধ্যমে জামিনযোগ্য করা হলে এই আইনের অপব্যবহার অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। তিনি বলেছেন, সাংবাদিকদের যে কোনো বিষয় প্রেস কাউন্সিলে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। সমকালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন। গতকাল সোমবার রাজধানীতে প্রেস কাউন্সিল কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।


সম্প্রতি প্রথম আলোর একটি সংবাদ নিয়ে মামলা-গ্রেপ্তার-বিতর্ক হলো। অথচ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিহিত বা নিষ্পত্তি করার জন্যই তো প্রেস কাউন্সিল গঠন করা হয়েছিল। এ অবস্থায় সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের আগে প্রাথমিক অভিযোগ প্রেস কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানোর দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?


নিজামুল হক নাসিম : বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমিও একমত। এটি হলে যে কোনো সাংবাদিককে যখন-তখন গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা যাবে না। তখন প্রেস কাউন্সিলে এসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রেস কাউন্সিল মামলায় উল্লিখিত অপরাধের ধরন অনুযায়ী সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের আলোকে প্রযোজ্য হলে আদালতে পাঠাবেন। তবে আমি এখনও আইনের আওতায় বিষয়টি (প্রেস কাউন্সিলে পাঠানো) সংযুক্ত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। এর কারণ, আইন দেশের সব নাগরিকের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। এখানে সাংবাদিক বা পুলিশ বা নাগরিকের জন্য এক রকম, আমার জন্য ভিন্ন রকম– এমন ব্যবস্থা জটিলতা তৈরি করতে পারে।


পরিবেশ-সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগের বিষয়ে আইন অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, অপরাধের উপাদান থাকলে পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করার সিদ্ধান্ত দেয়। তাহলে সাংবাদিকদের বেলায় প্রেস কাউন্সিল কেন সেই ভূমিকা নেবে না?


নিজামুল হক নাসিম : আইন হবে সবার জন্য। সেখানে ভিন্ন রকম ব্যবস্থা হতে পারে না। তবে যেহেতু পরিবেশ-সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে একটি ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে, তাই সাংবাদিকদের ব্যাপারে শুধু অভিযোগ গ্রহণের বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব প্রেস কাউন্সিলের থাকা উচিত। এটি করতে পারলে ভালো। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধন করতে হবে। আমার মনে আছে, শ্রদ্ধেয় প্রয়াত সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরীকে একবার কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেওয়া হয়েছিল। এতে তাঁর কী ক্ষতি হয়েছে জানা নেই, তবে দেশের মানুষ লজ্জা পেয়েছিল। ওই মামলা যদি প্রেস কাউন্সিলে আসত, তাহলে এমন ঘটনা ঘটত না। আর এখন সাংবাদিকদের বেলায় অনেক ক্ষেত্রে জামিনযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের জামিন হয় না। জামিনের ব্যাপারেও আমাদের আরও ইতিবাচক হওয়া উচিত। মানুষ মামলা করে বিচারের জন্য; জামিন আটকে রাখার জন্য নয়। বিচারই মুখ্য হতে হবে। কিন্তু প্রথম দিনই যে কোনো মামলায় যে কাউকে আটকে রাখার বিষয়টি ভালো লাগে না।


প্রথম আলোর একটি রিপোর্টে ব্যবহৃত ‘ফটোকার্ড’ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। ফটোকার্ড প্রত্যাহারের পরও বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?


নিজামুল হক নাসিম : যে ঘটনা ঘটেছে, তার দায়দায়িত্ব অবশ্যই সংবাদিক ও সম্পাদককে নিতে হবে। বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উল্লিখিত সবুজকে চিনেছি; কিন্তু দিনমজুর জাকির কে? সেটা নিয়ে প্রথম আলো কেন কথা বলছে না? তাঁর পরিচয়, সাক্ষাৎকার প্রকাশ হলে জানা যেত সবুজ বা জাকিরের বক্তব্যের কোনটি কার ছিল। প্রথম আলোর কাছ থেকে এ ধরনের রিপোর্টিং আশা করি না। আর একটি বিষয়, ১৭ মিনিটের মধ্যে প্রথম আলো ফটোকার্ড বা রিপোর্ট– যেটাই হোক প্রত্যাহার করেছে, তাতেও দেশের ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। স্বাধীনতা দিবসকে জড়ানোর কারণে ওই রিপোর্ট ভাইরাল হয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে। এটি কষ্টদায়ক। যে বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক উঠেছে, তা শিশু সবুজ বা দিনমজুর জাকিরের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। জাকির নামে কেউ আছে কিনা, সেটা অনুসন্ধান হওয়া উচিত।


কিছু ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগে অপব্যবহার হচ্ছে। এ নিয়ে দেশ-বিদেশেও নানা আলোচনা রয়েছে। অনেকেই এই আইনকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থি বলে মন্তব্য করছেন। আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই?


নিজামুল হক নাসিম : সংসদের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি কার্যকর হয়েছে। জনগণ আইনটি মানতে বাধ্য। একটি আইন কার্যকর হলে তার সমালোচনা হবে, সমস্যা দেখা দেবে; এটা স্বাভাবিক। আবার আইনটি পরিবর্তনও করা হতে পারে। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আইনটির দরকার আছে। তবে এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন আছে। এটি শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েই আছে, তা নয়। নানা কারণে আরও অনেক আইন নিয়ে এমন প্রশ্ন আছে। কারণ, এটি যাঁরা প্রয়োগ করেন, তাঁরা অপব্যবহার করেন। তখন জনমনেও আইনটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ পায়। তাই যে কোনো আইন যথাযথভাবে ব্যবহার হতে হবে। যাঁরা অপব্যবহার করেন, তাঁদের প্রশাসনিকভাবে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এখানে বিশেষ ক্ষমতা আইনের কথা বলা যায়। এই আইন প্রণয়নের পর আমরা দেখলাম, যে উদ্দেশ্যে আইনটি হয়েছে, সেটি বাদ দিয়ে অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই জনগণ কখনও আইনটি গ্রহণ করেনি। এটি এখন আস্তে আস্তে প্রায় মৃত আইনে পরিণত হয়েছে, অর্থাৎ ব্যবহার হচ্ছে না।


আরেকটি বিষয় আছে, আদালতের ভূমিকা। আইনে কোন অপরাধে আসামিকে আদালত জামিন দেবেন বা অপরাধ জামিনযোগ্য হবে না, সেটি বলা থাকে। আবার আদালতেরও কিছু এখতিয়ার থাকে। কিন্তু দেখা যায়, কিছু ক্ষেত্রে আদালত সেটারও সঠিক প্রয়োগ করেন না। ফলে এ নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন থাকে। এই প্রশ্ন শুধু আদালত নিয়ে তা নয়; নানা ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসন নিয়েও আছে। তবে এখনও আইনের যে কোনো অপব্যবহার নিয়ে আদালত পর্যন্ত যেতে পারলে ন্যায়বিচার পাওয়া যায়। তাই আইনের সঠিক প্রয়োগের দিকে আমাদের সবারই নজর দেওয়া দরকার।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us