সন্‌জীদা খাতুন: জাতীয় জাগরণের সুরসাধক

সমকাল মফিদুল হক প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৩০

সন্‌জীদা খাতুন– আমাদের কিংবা পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের অনেকের কাছে যিনি সন্জীদা আপা অথবা মিনু আপা কিংবা মিনুদি; সবাই তাঁর কাছের মানুষ হিসেবে বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী; তাঁদের পক্ষে কঠিন তাঁকে নিয়ে লেখা। কেননা, লিখতে গেলে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ যদি প্রাধান্য পায়, তবে মনে হবে আসল মানুষটাকে সেখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাঁর স্নেহচ্ছায়ায় সিক্ত হয়ে জীবনের পথচলায় সমৃদ্ধি অর্জনকারী অনেকের মতো আমিও বিহ্বল হয়ে পড়ি এই ভেবে যে, কীভাবে কাছে থেকে দেখা-জানা অনন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এই শিল্পসাধকের অবদানের স্বরূপ মেলে ধরা যায়।


বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু হয়েছে জীবনপথে সন্‌জীদা খাতুনের বাস্তব অভিযাত্রা। তার পর থেকে জাতির আত্মোপলব্ধি ও জাগরণের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্তি ও সংযুক্তি তো ক্রমে নিবিড় থেকে নিবিড়তর হয়েছে। পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পথে বাঙালি জাতির পথ-পরিক্রমণ ও তাঁর জীবনসাধনা পরস্পর চলেছে হাতে হাত ধরে। জাতির মুক্তি সাধনায় নিজ অবস্থান থেকে বিপুলভাবে অবদান রেখেছেন তিনি। অধ্যাপনা, পাণ্ডিত্যপূর্ণ রচনা, সাহিত্য ও সংগীত বিচার, রবীন্দ্র-নজরুলের ব্যাখ্যাতা– নানা দিকে ছড়িয়ে আছে তাঁর সৃজনস্পর্শ। সবচেয়ে বড়ভাবে তিনি সচেষ্ট রয়েছেন গান দিয়ে মানবচিত্তের জাগরণ ঘটাতে; গানের সুবাদে জাতিসত্তার সংহতি ও বিকাশ সাধনে। পদানত জাতির জীবনে সংগীত যে কী বিপুল প্রভাবসঞ্চারী হতে পারে, সেটা প্রকাশ পায় তাঁর জীবনের দীর্ঘ সাধনা এবং সংগীতের সমাজে সৃষ্ট অন্তঃসলিলা অভিঘাতে।


সন্‌জীদা খাতুনের জীবন-পরিব্রজ্যা এবং জাতির জাগরণ ও সংগ্রাম তাই আমরা একত্রে মিলিয়ে দেখতে পারি এবং সেই দেখায় খুঁজে পাব মিলন ও মিথস্ক্রিয়ার প্রতিফলন। জানব সন্‌জীদা খাতুনের সত্তার স্বরূপ, যখন তিনি আর ব্যক্তি পরিচয়ের বৃত্তে সীমিত থাকেন না; হয়ে ওঠেন বিপুলসংখ্যক শিল্পপথযাত্রীর একান্ত আপনকার ব্যক্তিত্ব; তাঁদের কাছের মানুষ।


সন্‌জীদা খাতুনের জীবনাভিজ্ঞতার শুরুতেই বলতে হয় ১৯৪৭ সালের দেশভাগের কথা। পার্টিশন ও ১৯৫০ সালের দাঙ্গার পর হিন্দু সমাজের সদস্যদের ব্যাপকভাবে দেশত্যাগ কিশোরী সন্‌জীদা খাতুনের জীবনেও এক শূন্যতার অনুভূতি সঞ্চার করে। রাতারাতি অপসৃত হন প্রিয় বান্ধবী ও শিক্ষিকার অনেকে। সেই ফাঁকা পরিসরে তাঁর বেড়ে ওঠা অব্যাহত থাকে পড়াশোনার পাশাপাশি ব্রতচারী শিক্ষণ ও গান নিয়ে। তারপর দেখা দেয় পাকিস্তানি তমসা ভেদ করে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি। পুলিশের গুলিতে ছাত্র-জনতার আত্মাহুতির প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক যে সমাবেশ হয় নারীদের, সেখানে গৃহী মাতার সঙ্গে তিনিও শরিক হন সভায়। আর পরের বছর শহীদ স্মরণে আয়োজিত প্রথম প্রভাতফেরিতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্রী সন্‌জীদা খাতুনের উজ্জ্বল উপস্থিতি। ঘর ও বাহির, আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও অনানুষ্ঠানিক বিদ্যা আহরণ, সংগীত ও জীবন– এমনই সম্মিলনে বয়ে চলে তাঁর জীবনধারা। যে জীবনে ছায়া বিস্তার করেন রবীন্দ্রনাথ– আর দশজনের থেকে অনেকটা আলাদাভাবেই।


১৯৫৪ সালে পূর্ববাংলায় মুসলিম লীগের ভরাডুবি ও যুক্তফ্রন্টের বিজয়ে যে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়, তা সন্‌জীদা খাতুনের জন্য সহায়ক ছিল। তিনি তাঁর একান্ত লালিত স্বপ্ন ও জেদ পূরণার্থে পড়তে যান শান্তিনিকেতনে। ততদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় অনার্সের পাঠ সমাপন করেছেন তিনি। শান্তিনিকেতনের রাবীন্দ্রিক উদার পরিবেশে বাংলা সাহিত্য অধ্যয়ন ও আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়ানো গান– দুইয়ে অবগাহন ঘটে তাঁর স্বাভাবিকভাবে।


দেশে ফেরার পরের একটি ঘটনা এখানে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। পাকিস্তানের শাসনকেন্দ্রে ঘটে গেছে রাজনীতির পরিবর্তন। কেন্দ্রে রিপাবলিকান পার্টির সহযোগিতায় সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এই সময়ে হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী আইনমন্ত্রী হিসেবে শাসনতন্ত্র প্রণয়নে বিশেষ উদ্যোগী হন। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্ন যখন তুঙ্গে তখন পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতাদের পূর্ববাংলা সফরের সময় তাঁদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হলে আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজনের মূল সংগঠক শেখ মুজিবুর রহমান– আওয়ামী লীগের উদীয়মান তরুণ নেতা। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন সন্‌জীদা খাতুন; শেখ মুজিব তাঁকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি পরিবেশন করার জন্য। পুরো গানটি তিনি অনুষ্ঠানে গেয়ে শুনিয়েছিলেন; বাঙালির সাংস্কৃতিক সত্তা ও জাতি-পরিচয়ের স্বরূপ যে গানে প্রকাশ পায় অনুপমভাবে। পশ্চিমা নেতাদের কাছে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছিল বাঙালি সত্তা ও তার অধিকারের প্রত্যয়– গান ও রাজনীতির সম্মিলনে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us