রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। রমজান মাসকে তিনটি বৈশিষ্ট দ্বারা বিন্যাস করা হয়েছে। গতকাল শেষ হয়েছে রহমতের দশদিন। রহমতের দশদিনে মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় ধন্য হয়েছে পৃথিবীবাসী। আজ শুরু হলো রমজানের দ্বিতীয় অর্থাৎ মাগফিরাতের দশদিন। মাগফিরাত অর্থ মাফ, মার্জনা, আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও গোনাহ থেকে নিষ্কৃতি লাভ।
গোনাহ করা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। মানুষ ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় গোনাহ করে ফেলে। এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। অস্বাভাবিক হলো গুনাহের ওপর বছরের পর বছর অটল থাকা এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা না করা।
যারা শয়তানের কুপ্ররোচনায় গোনাহ করে ফেলে এবং গোনাহ থেকে মাগফিরাত লাভ করতে পারে না তাদের জন্য মাগফিরাত লাভের বিশেষ সুযোগ হলো রমজানের দ্বিতীয় দশদিন। আল্লাহ তায়ালা রমজানের দ্বিতীয় দশদিনে বান্দাদেরকে ব্যাপকহারে ক্ষমা করেন।
গোনাহগার বান্দা অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ হলেন পরম ক্ষমাশীল। আল্লাহ ক্ষমা করতে ভালোবাসেন।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন অপরাধ করে থাকো। আর আমিই সব অপরাধ ক্ষমা করি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে মাগফিরাত প্রার্থনা করো, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেব। (সহিহ মুসলিম-৬৪৬)
রমজান ইবাদতের মাস। এই মাসে আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে মশগুল থেকে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। রমজান মাসে সেহরি খাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠতে হয়। এই সময়কে কাজে লাগানো চাই। সেহরির সময়টুকু ক্ষমা লাভের বিশেষ এক মুহূর্ত। এই মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালা অপেক্ষায় থাকেন বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য। বান্দার কাজ হলো ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের মর্যাদাবান প্রভু দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার নিকট কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। (মিশকাত-১২২৩)
রমজানের মাগফিরাতের এই দশদিনে ক্ষমা লাভের জন্য সব সময় জিকির আজকারের মাধ্যমে মহান আল্লাহকে স্মরণ করা চাই। আল্লাহ তায়ালাকে বান্দা যত বেশি স্মরণ করবে আল্লাহও বান্দাকে ততবেশি স্মরণে রাখবে। বান্দা যদি আল্লাহর স্মরণে থাকে তবে আল্লাহর নিকটবর্তী হবে। আর আল্লাহর নিকটবর্তী হলেই ক্ষমা লাভ করা সম্ভব হবে। কেন না কারও থেকে কিছু পেতে হলে তার নিকটে আসতে হয়।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমার সম্পর্কে বান্দা যেমন ধারণা করবে, সে অনুসারে আমি তার সঙ্গে আছি। আমি তার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। সে যদি আমাকে তার মনে মনে স্মরণ করে, তবে আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি। আর যদি সে কোনো সমাবেশে আমার স্মরণ করে, তবে এর চেয়েও উত্তম এক সমাবেশে আমি তার স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে অর্ধ হাত নিকটবর্তী হয়, তবে আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ নিকটবর্তী হই। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে, তবে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। (তিরমিজি-৩৬০৩)
হাদিসের ব্যাখ্যায় আমাশ (রহ.) বলেন, আমি তার এক হাত নিকটবর্তী হই— এর মর্ম হলো আমার রহমত ও মাগফিরাতকে বান্দার নিকটবর্তী করি। বান্দা যখন আমার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে এবং আমার নির্দেশ পালন করে নিকটবর্তী হয় তখন তার প্রতি আমার মাগফিরাত ও রহমত অতিদ্রুত অগ্রসর হয়।
রাসুল (সা.) সৃষ্টিজীবের জন্য রহমতস্বরূপ। তিনি আমাদের মাগফিরাত লাভের অন্যতম মাধ্যম। তাঁর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করলে ক্ষমা লাভের পথ সুগম হয়। তাই রমজানের মাগফিরাতের এই দশদিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা চাই।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকে কি এই সংবাদ খুশি করে না যে, আপনার উম্মতের মধ্য থেকে যদি কোনো ব্যক্তি আপনার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে তবে আমি তার জন্য দশবার মাগফিরাত চাইবো। আর কেউ যদি আপনাকে একবার সালাম পাঠায় আমি তার প্রতি দশবার সালাম পাঠাব। (নাসায়ি-১২৯৮)
আল্লাহ তায়ালা পরম ক্ষমাশীল। তিনি বান্দাদেরকে ব্যাপকহারে ক্ষমা করবেন বলেই রমজানের দ্বিতীয় দশদিন করেছেন মাগফিরাতময়। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করতে প্রস্তুত। বান্দার করণীয় হলো গোনাহের ওপর অনুতপ্ত হওয়া এবং মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া।