দুপুরে স্কুল থেকে বাসায় ফেরে ছয় বছরের সামিয়া আক্তার ওরফে বর্ষা। এরপর সে গোসলে যায়। এই ফাঁকে মা তার জন্য ভাতের থালা সাজান। কিন্তু ভাত না খেয়ে খেলতে বেরিয়ে যায় ছোট্ট সামিয়া। মা কিছুক্ষণ বসে ছিলেন খাবার খাইয়ে দিতে। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। এরপরও বাসায় ফেরেনি সামিয়া। খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। আট ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে বাসার পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের লিফটের গর্তে পানিতে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানার কুসুমবাগ এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। আজ শুক্রবার বিকেলে তার দাফন হয়। এ ঘটনায় নির্মাণাধীন ভবনের মালিক আবু জাহেদ ও ঠিকাদার সাদ্দাম হোসেনকে আসামি করে আজ শুক্রবার খুলশি থানায় মামলা করেছেন সামিয়ার মা শেফালী বেগম। তবে আসামি দুজন এখনো ধরা পড়েননি।
সামিয়া কুসুমবাগ এলাকায় শেখ রাসেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা মো. আসলাম বাসার সাজসজ্জার কাজ করেন। মা শেফালী বিভিন্ন মানুষের বাসায় কাজ করেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে কথা হয় মা শেফালী বেগমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েকে গোসল করিয়ে ভাতও দিয়েছিলাম। একটু খেলতে বেরিয়ে তার আর ভাত খাওয়া হলো না। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বিকেলে এলাকায় মাইকিং করা হয়। পরে রাতে মেয়ের লাশ পাওয়া যায়। বারবার বলা হলেও নির্মাণাধীন ওই ভবনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয় লোকজনও তাগাদা দিয়েছেন। তারা নিরাপত্তাব্যবস্থা না নেওয়ায় মেয়েকে হারাতে হলো। ভবনমালিক আর ঠিকাদারের শাস্তি চাই। আর কোনো মাকে যাতে মেয়েহারা হতে না হয়।
শেফালি-আসলাম দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান ছিল সামিয়া। ছোট ছেলের বয়স দেড় বছর। সারাক্ষণ পুরো পরিবারকে মাতিয়ে রাখত সামিয়া। তার নানি রানু বেগম বলেন, নাতনি এভাবে চলে যাবে কোনো দিন ভাবিনি। তাদের বাসায় এলে সারাক্ষণ পিছে পিছে থাকত। নানা বায়না ধরত। এখন আর কেউ বায়না ধরবে না নানির কাছে।