গতকাল রোববার সকাল ১০টা। রাজধানীর খামারবাড়ি মোড়ের পূর্ব পাশে দাঁড়িয়ে আছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের গাড়ি। গাড়ির পাশে বিক্রয়কেন্দ্রের কাউন্টারের লাইনে গোটা তিরিশেক মানুষ। সুলভ মূল্যে মাংস, দুধ, ডিম কিনতে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে এবং কথা বলে বোঝা গেল, লাইনে দাঁড়ানো এসব মানুষের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত। করোনা-পরবর্তী নানা সংকটে আর্থিক সক্ষমতা হারিয়েছেন তাঁরা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নতুন করে পড়েছেন বিপদে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র থেকে গরুর মাংস ও দুধ-ডিম কিনেছেন নাজমুল আহসান ও সালমা বেগম দম্পতি। একজনের এক কেজির বেশি মাংস কেনার সুযোগ নেই, তাই স্বামী-স্ত্রী দুজন লাইনে দাঁড়িয়ে দুই কেজি গরু ও মুরগির মাংস কিনেছেন। নাজমুল জানান, তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকায়।
ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র থেকে এক ডজন ডিম, এক কেজি গরু এবং এক কেজি মুরগির মাংস কিনেছেন ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা হাসিনা বেগম। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
শুধু সালমা কিংবা হাসিনা নন, তাঁদের মতো আরও অনেক মধ্যবিত্তকে এখন কম দামে পণ্য পেতে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। কারণ, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি না থাকায় ক্রয়ক্ষমতা কমেছে মধ্যবিত্তদের বড় একটি অংশের। খামারবাড়ি মোড়ের মতো ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ২০টি ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের। এলাকাগুলো হলো সচিবালয়ের পাশে, মিরপুর ৬০ ফিট রোড, আজিমপুর মাতৃসদনের সামনে, পুরান ঢাকার নয়াবাজার, গাবতলী, হাজারীবাগ, মতিঝিল, আরামবাগ, মোহাম্মদপুর জাপান গার্ডেন সিটি, মিরপুর কালশী, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা নতুন বাজার, বনানী কড়াইল বস্তি ও কামরাঙ্গীরচরে।
এই বিক্রয়কেন্দ্রগুলোয় প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৪০ টাকা, খাসির মাংস ৯৪০ টাকা, ড্রেজস ব্রয়লার মুরগি ৩৪০ টাকা, দুধ এক লিটার ৮০ টাকা ও ডিম এক ডজন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঁচটি পণ্যের মধ্যে চারটির দাম বাজার অনুপাতে কম। তবে ব্রয়লার মুরগি নিয়ে অনেক ক্রেতাকে প্রশ্ন তুলতে দেখা গেছে। বেসরকারি স্কুলের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাধারণ বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এখানে বাজারের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।’