গত প্রায় দেড় দশকে বিশেষত যখন থেকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আছে; বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বারবার নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। সর্বশেষ, সরকারি দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এ সংগঠনটি আলোচনায় এসেছে একটি ছবির কারণে– পা টেপার ছবি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে ভাইরাল সে ছবিতে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকটক দেখছেন সেখানকার ছাত্রলীগ সভাপতি এবং তাঁর পা টিপছেন দুই ছাত্রলীগ নেতা। সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, ছবিটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের।
আধুনিক সমাজ ও সংস্কৃতিতে এ ধরনের চিত্র অকল্পনীয়। গল্প হিসেবে এসব আমরা শুনেছি, আগেকার দিনে জমিদারেরা তাঁদের গৃহভৃত্য বা মোসাহেবদের দিয়ে এ ধরনের কাজ করাতেন। আলোচ্য ছবিতে তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শুধু নয়; পরস্পর সহকর্মীও বটে। অর্থাৎ তাঁরা কেউই কারও ভৃত্য নন। তারপরও কেন তাঁরা এমন লজ্জাজনক ঘটনা ঘটালেন, তা অবশ্য অনুধাবন করা কঠিন নয়। ছাত্রলীগ পদ-পদবির বিষয়কে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে; নেতাদের ভৃত্যের মতো সেবা না করা পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই তা লাভ কঠিন। সংগঠনটিতে পদ বাণিজ্য এখন কোনো আড়াল-আবডালের বিষয় নয়।
এখন কারও অজানা নয়, নতুন শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার পরই আবাসিক হলে সিটের জন্য ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের পেছনে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। তাঁদের কাছে গেস্টরুম এক আতঙ্কের নাম। সেখানে নবীন শিক্ষার্থীকে কথিত আদব-কায়দা শেখানোর নামে বিভিন্ন প্রকার শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হয়। গ্রাম থেকে উঠে আসা মেধাবীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শুরুতেই এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। হলের বাইরে শহরে অবস্থান করার মতো অনেকের সামর্থ্য না থাকায় শিক্ষার্থীরা মুখ বুজে এসব সহ্য করেন। এমনকি প্রশাসনকে জানাতেও ভয় পান। ছাত্রনেতারা যখন র্যাগিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণের সুযোগ পান, তারই ধারাবাহিকতায় পা টেপাতে তাঁরা কুণ্ঠা বোধ করেন না। ফলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল, অর্থাৎ যাঁর পা টিপছিলেন তাঁরই কমিটির দুই সদস্য, ১০ বছর আগে তাঁর ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও তিনি কীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন? গত বছরের জুলাইয়ে সমকালে তাঁকে নিয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়– পরিসংখ্যান পড়তে পড়তে ‘আদু ভাই’। ১৭ বছর আগে ভর্তি হওয়া এই নেতা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজত্ব করছেন। তাঁর নানা অপকর্মও সমকালে ওই প্রতিবেদন উঠে আসে। এমনকি তিনি শাহ আমানত হলে ৩১১ নম্বর কক্ষে একাই বাস করছেন, অবৈধভাবে। তাঁর সঙ্গে যাঁরা পড়াশোনা করেছেন; অনেকেই এখন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক। ক্ষমতার মধ্যে ‘মধু’ আছে বলেই এত বছর ধরে তিনি এভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছেন।