পাকিস্তানের ভাঙন ও ইতিহাস নিয়ে ভ্রান্তি

সমকাল সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২৩, ০০:৩১

পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদীরা অবিভক্ত ভারত থেকে মুসলমানদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার পক্ষে সোৎসাহে কাজ করেছেন, কিন্তু পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার চেষ্টাকে মনে করেছেন চরম বিশ্বাসঘাতকতা। বিচ্ছিন্নতাকে দু’ভাবে দেখার কারণ কী? রহস্যটা কোথায়? জবাব হচ্ছে, তাঁদের মতে, পাকিস্তানবাদী বিচ্ছিন্নতাতে ছিল মুক্তির প্রতিশ্রুতি। আর বাঙালি জাতীয়তাবাদী বিচ্ছিন্নতাতে ছিল ভারতের অধীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা।


প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আসে, সে হলো ওই রহস্য। বহু কিছুতেই পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদীরা রহস্য দেখতে পেয়েছেন এবং ভেতরে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে আঁচ করেছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনটা অবশ্য তাঁদের কাছে রহস্য বলে মনে হয়নি; ষড়যন্ত্র হিসেবেই ধরা পড়েছে। তাঁরা মনে করেছিলেন, এই ষড়যন্ত্রে অনিবার্যভাবেই যুক্ত ‘ইন্ডিয়া’। তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে জনমত তৈরি করতে সাহায্য করেছে এবং পরে যুদ্ধ বাধিয়েছে। বলা বাহুল্য, পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদীদের প্রধান নিশানা ছিলেন শেখ মুজিব। তাঁদের মতে, শেখ মুজিব পাকিস্তান ভাঙার ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয়েছিলেন। তিনিই প্রধান ‘বিশ্বাসঘাতক’।


মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে এই হলো পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদীদের বয়ান। যেটা দুশ্চিন্তাজনক তা হলো, ইতিহাসের এই বয়ানে বিশ্বাসী মানুষ বাংলাদেশেও আছে। তাদের সংখ্যা কমছে না, বরং বাড়ছে। এই পরিস্থিতির একটা কারণ, দেশে এখন ইতিহাসের চর্চা নেই। ইতিহাসের চর্চাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে না। যে যার মনগড়া কথা প্রচার করে চলেছে। জ্ঞানের স্তর নেমে গেছে। বঙ্গোপসাগরে পানির স্তর যত উঁচু হয়েছে, তার অনুপাতেও বেশি মাত্রায়। আরেকটা কারণ, স্বাধীন বাংলাদেশ দেশবাসীর জন্য গৌরব ও সম্মান বয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়িত হয়নি।


পাকিস্তান রাষ্ট্রটি কেমন হবে; সে রাষ্ট্রে মানুষে-মানুষে সম্পর্ক কেমন দাঁড়াবে– এসব জরুরি প্রশ্ন নিয়ে পাকিস্তান আন্দোলনের সময়েও কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি। শুধু ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ বলা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ কোনো গান যে লেখা হয়েছে, তাও নয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল যে গানটি, সেটি লিখেছিলেন কবি ফররুখ আহমদ। ওই গানটি যে পুরোপুরি বাংলা শব্দে লিখিত ছিল, তা নয়। মূল ধুয়া ছিল– ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান/ কবুল মোদের জান পরাণ।’ গানটি দৈনিক আজাদে প্রকাশিত হয়, পত্রিকাটির মালিক মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর নামে। ফররুখের লেখাটি তিনি বেমালুম আত্মসাৎ করে ফেলেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে আভাস পাওয়া যাচ্ছিল– পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ওই রকম ঘটনা আকছার ঘটতে থাকবে; দুর্বলের সৃষ্টিকে প্রবল কেড়ে নেবে।


পাকিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানটা কেমন হবে; কতটা বিস্তৃত; সে সম্পর্কে পাকিস্তানপন্থিদের কোনো ধারণাই ছিল না। তরুণ কবি তালিম হোসেন একটি গান লিখেছিলেন, যার প্রথম দুটি কলি–, ‘দিল আজাদীর দেশ পাকিস্তান/ কদম কদম চলে জঙ্গী জোয়ান।’ পাকিস্তান মনের ভেতর থাকবে; তার জন্য জঙ্গ চলবে; কিন্তু তার ভৌগোলিক অবস্থানটা কোথায় হবে– এ প্রশ্নের জবাব কেউ দেয়নি। চেপে যাওয়া হয়েছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর নাজির আহমদ যে জনপ্রিয় গানটি লিখেছিলেন, তাতে পাকিস্তানের অঞ্চলগুলোকে এক করার উদ্দীপক বাণী ছিল– ‘পূরব বাংলার শ্যামলিমায়/ পঞ্চনদের এ অরুণিমায়/ ধূসর সিন্ধুর মরু সাহারায়/ ঝাণ্ডা জাগে যে আজাদ।’ কিন্তু ওই ঝাণ্ডা কী করে পরস্পরবিরোধী স্বার্থকে এক রাখবে; এমনকি কবিতা চুরির ঘটনার দরুন বিবদমান আকরম খাঁ ও ফররুখ আহমদের পুনর্মিলন ঘটাবে, তার রহস্য মোটেই পরিষ্কার করা হয়নি। পরিষ্কার করা সম্ভবও ছিল না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us