কয়েক দিন ধরে কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ইয়াফি। তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন মা লুশান্তা রহমান। চিকিৎসক তাদের জানান, বায়ুদূষণের কারণে অ্যাজমাসহ শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় আক্রান্ত শিশুটি। লুশান্তা রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাস্ক পরেই স্কুলে যায় ইয়াফি। তারপরও অসুখে পড়ল। বাচ্চাটাকে কি এখন স্কুলেও পাঠাতে পারব না?’
তিন শিশুসন্তান নিয়ে কমলাপুর এলাকায় থাকেন গৃহকর্মী পারুল বেগম। তাঁর দুই মেয়ে প্রায়ই অসুস্থ থাকে। আর ছেলে রবিউল বিছানা থেকেই উঠতে পারে না। পারুল বেগম বলেন, ‘এনজিওর ডাক্তাররা কয়, আমার তিন বাচ্চারই অপুষ্টি। খাওন-দাওন ছাড়া এ রোগ ছাড়ব না। কিন্তু খাওন কি আকাশ তোন পড়ব?’
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুরা পুষ্টিকর খাবার ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুরাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চার দেয়ালবন্দী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। আর সব স্তরের শিশুরাই শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ ১৭ মার্চ দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে জাতীয় শিশু দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনকে দেশে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদ্যাপন করা হয়। ওয়ার্ল্ড ভিশনের ডিরেক্টর ফিল্ড অপারেশনস লিমা হানা দারিং আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশের শিশুরা স্বাভাবিক শৈশব পাচ্ছে না। অপুষ্টি, পরিবেশদূষণ তো রয়েছেই। আমাদের খেলার মাঠগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। শিশুরা ঘরবন্দী হয়ে পড়ছে। দেশে ১১ লাখ ৫০ হাজার পথশিশু আছে। শিশুশ্রমে জড়িত ১৭ লাখ শিশু। শিক্ষা, চিকিৎসা—সবকিছু থেকেই তারা বঞ্চিত।’
গত সোমবার প্রকাশিত ইউনিসেফ বাংলাদেশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সাড়ে ৩ লাখের বেশি শিশু ‘মারাত্মক অপুষ্টির শিকার’। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় গত বছর অপুষ্টিতে ভোগা মাত্র ১২ হাজার শিশু চিকিৎসা পেয়েছে।
বায়ুদূষণের কারণেও কাশি, শ্বাসকষ্ট ও মাইগ্রেনের মতো সমস্যায় ভুগছে শিশুরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে শিশুরা।