দালালের আলখাল্লা কত বড়?

আজকের পত্রিকা মামুনুর রশীদ প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৬:৩২

বহু বছর আর বহু শতাব্দী অতিক্রম করে একটি শব্দ ভারতবর্ষে চালু হয়েছে তা হলো, দালাল। দালাল শব্দটি সম্ভবত ফারসি অথবা আরবি। সংস্কৃত, হিন্দি বা বাংলা নয়। প্রথম দিকে শব্দটি হয়তো ছিল একটু ইতিবাচক, তাতে অর্থ দাঁড়ায় কারও মালিকানার অংশ না হয়ে তার পক্ষে কাজ করা। বিনিময়ে কিছু অর্থপ্রাপ্তি এবং নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া।


আমাদের এই অঞ্চলে প্রথমে বহুলভাবে শব্দটির প্রয়োগ হয় পাটের দালাল হিসেবে। এই দালালেরা সাধারণ চাষিদের কাছ থেকে পাট কিনে বড় বড় কোম্পানির কাছে বিক্রি করত। শব্দটি পাকিস্তান আমলে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। পূর্ব বাংলার জনগণ থেকে বিযুক্ত পাকিস্তানের স্বার্থে কাজ করার অভিধা হিসেবে। যারাই পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলত, তাদের বলা হতো দালাল। এই দালাল শব্দটি ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। এই দালালেরা পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে নরঘাতক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চর হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিজাতীয় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর খুব প্রয়োজনীয় একটি অংশ হয়ে পড়ে তারা। বহু দেশপ্রেমিককে হত্যা করার পেছনে এদের কারসাজি ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে তাদের বিচারও শুরু হয়। সেই বিচার কয়েক বছর আগে কার্যকর হতে থাকে। কিন্তু দালালির অবসান হয় না।


বর্তমানে দেশে অনেকেই কোনো রাজনৈতিক দল না করেও দালাল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভিন্ন পরিচয়ে এবং ভিন্ন কর্মকাণ্ডের এই দালালদের পুনরায় আবির্ভাব হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে দালালের প্রয়োজন হয় এবং এই দালালেরা এত সক্রিয় যে যেকোনো জায়গায় চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা মাঠে নেমে পড়ে। চাকরির নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে তাদের ধাপে ধাপে পরিচয়। বিপুল অর্থের বিনিময়ে সরকারি চাকরির নিয়োগে তারা নিশ্চয়তা দেয়। তাদের পরীক্ষা দিতে হয় না, দিলে খাতা সাদা রেখে এলেও হয়, মানে কোনো কিছু লিখতে হয় না। এই দালালেরা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকে। আগাম টাকা নিয়ে তারা কাজে নেমে পড়ে এবং কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে টাকা ফেরত দিয়ে দেয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে টাকা ফেরত দেয়ও না।


আরেক ধরনের দালাল আছে যারা বিদেশে চাকরি দেওয়ার নামে অগ্রিম অনেক টাকা নিয়ে নেমে পড়ে। তারা বিদেশে কর্মী পাঠানোর লোভ দেখিয়ে নানা ধরনের প্রতারণা করে অনেক পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আর আছে জায়গা-জমি, বাড়িঘর বিক্রির দালাল। তারাও বেশ ভালো অঙ্কের টাকা নিয়ে এ কাজটি করে থাকে এবং এদের ছাড়া বড় ধরনের কোনো বিক্রিবাট্টা সম্ভব নয়।


এরপর আছে গাড়ির দালালি। গাড়ি বেচাকেনার জন্যও একটা দালাল বাহিনী সব সময় সক্রিয় আছে। একটা বড় অমানবিক দালালি চলে সরকারি হাসপাতালগুলোতে। রোগী ভর্তি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা—এ রকম পদে পদে এই দালালেরা সক্রিয়। সবচেয়ে দুর্ধর্ষ দালালি হচ্ছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। এ এক বিশাল ব্যবসা। মফস্বল শহরগুলোতে মোটরসাইকেল নিয়ে এই দালালেরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। সুস্থ মানুষকে রোগী বানিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ক্লিনিকে নিয়ে আসে। ডাক্তাররা রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য প্রেসক্রিপশন দিয়ে দেন এবং বিনিময়ে তারা সরাসরি একটা কমিশন পেয়ে থাকে। এতে এখন আর কোনো রাখঢাক নেই, কোনো গোপনীয়তা নেই। হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং সেই সঙ্গে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোও ব্যবসার দিক থেকে সবার ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে।


আরেক ধরনের উচ্চমার্গের দালাল আছে সরকারি কাজ বাগানোর জন্য, আর তাদের কোনো অফিস নেই। তবে আছে দামি গাড়ি এবং বিনোদনের জায়গা। তারা সব রকম কায়দায় ক্ষমতাবানদের প্রভাবিত করে থাকে এবং তাদের কমিশনের টাকা বিদেশে বসে পাওয়ারও ব্যবস্থা করে দেয়। বিদেশে এই দালালদের একটা সম্মানজনক নামও দেওয়া হয়েছে তা হলো, লবিং গ্রুপ। আর দেশি দালালেরা এখনো লবিং গ্রুপে উঠতে পারেনি। তবে কাজের দিক থেকে ওই লবিং গ্রুপের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী দেশি দালালেরা।


দালালদের প্রধান অস্ত্র দুর্নীতি। রাষ্ট্রের অর্থ তাদের মাধ্যমে প্রতিদিন বিদেশে চলে যাচ্ছে। তারা শিক্ষাব্যবস্থাটাকে নিয়োগ ও ভর্তি-বাণিজ্যের মাধ্যমে একেবারে পঙ্গু করে দিয়েছে। এই দালালির সূচনা সাধারণত হয়ে থাকে জবাবদিহিবিহীন সরকারের সময়ে। পাকিস্তানে সামরিক শাসনের সময়ে এগুলো শেখানো হয়েছিল। আমাদের দেশেও পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে এসব হয়েছে। কিন্তু নব্বইয়ের পর দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হলেও এই দালালদের অবসান তো হয়ইনি; বরং আরও সক্রিয় হয়ে নতুন নতুন পথে তাদের যাত্রা শুরু হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us