আজকের দিনটি শুধুমাত্র ঘুম প্রেমীদের। কারণ আজ বিশ্ব ঘুম দিবস। ঘুমের অভাবে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির বিষয়ে মানুষকে জানানোর জন্য প্রতি বছর মার্চ মাসের তৃতীয় শুক্রবার দিবসটি বিশ্ব ঘুম দিবস হিসেবে পালিত হয়। ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব স্লিপ মেডিসিনের ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে কমিটি ২০০৮ সাল থেকে এ দিবস পালন করে আসছে। এ বছর এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ‘সু-স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য’।
তবে বাস্তবতা হলো, আমরা ঘুমের ক্ষেত্রে যেন দেউলিয়া’ হয়ে যাচ্ছি। গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইল ঘাঁটি, আবার ভোরে আল্যার্ম দিয়ে উঠি। অথচ প্রয়োজন কিন্তু উল্টোটা করার। খাবার কিনতে পয়সা লাগে, অথচ ঘুম কিনতে হয় না, তবু ঘুমাই না আমরা। খাদ্য বাসস্থানের মতো ঘুমও কিন্তু বেঁচে থাকার অপরিহার্য একটি শর্ত।
বর্তমানে ঘুমজনিত প্রায় ৮০ টি অসুখ রয়েছে বলে জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফেলো অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু। তিনি বলেন, ঘুমের অভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, বাচ্চারা স্মৃতি হারায়, মেধা কমে যায়। বড়রা হৃৎপিণ্ডের এবং স্নায়ুর সমস্যায় পড়েন। ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, অ্যালঝেইমারের আশঙ্কা বাড়ে। বেশি নিদ্রাহীনতা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ঘুম কম হওয়ার ফলেই হাইপার টেনশন, পেটের অসুখজাতীয় একাধিক রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের অন্তত ১০০ মিলিয়ন মানুষের পর্যাপ্ত ঘুম হয় না এবং বিশ্বের পূর্ণবয়স্ক মানুষের দুই-তৃতীয়াংশ সঠিকভাবে ঘুমান না। রাতে ঘুম কম হওয়ার ফলে পরের দিনের কাজে পরিশ্রান্ত মনে হয়, শরীর ও মন কাজের উপযোগী থাকে না। এ কারণে সপ্তাহের প্রতি রাতেই আট ঘণ্টা করে ঘুমানোর পরামর্শ দেন গবেষকরা। গবেষকরা আরও বলেন, ছুটির দিন শরীরে ভিটামিন ‘ডি’পাওয়ার জন্য ছয় থেকে আট মিনিট রোদে থাকা উচিত। কারণ সূর্যের আলো দেহঘড়ি ঠিক রাখে।
অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু পরামর্শ দেন, ঘুমাতে যাওয়ার এক-দু ঘণ্টা আগে থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকুন। বিকেলের রোদে কিছুক্ষণ গায়ে মেলাটোনিন হরমোন বাড়িয়ে নিন, এই হরমোন আমাদের ঘুমাতে সাহায্য করে। প্রয়োজনে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটু গোসল করে নিতে পারেন। চা-কফি বাদ দিন ঘুমানোর আগে। আর সুযোগ পেলে দুপুরে ভাতঘুমও দিন পনের বিশ মিনিটের জন্য।
মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, অনেকেই মনে করেন বেশি ঘুমান মানেই অলস মানুষ, সেটি ঠিক নয়। আসলে জীবনযুদ্ধে লড়াই করতে করতে আমাদের সকলকেই কখনও না কখনও একটু আশ্রয়হীনতা গ্রাস করে, সে সময়ে ঘুমের চেয়ে আরাম কিন্তু আর কোনো কিছুতে পাওয়া যায় না। মোবাইলের চার্জ যেমন করে ফুরিয়ে যায়, চার্জ দিতে হয়, ঠিক সে রকমভাবেই আমাদের মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্রকে নিজেদের মতো করে চার্জ করে নিতে হবে। আমাদের সবার নিজস্ব শারীরিক ছন্দ আছে, সেইমতো খাপে খাপে ঘুমানো দরকার।
রবীন্দ্রনাথ ঘুমচোরা কবিতার সেই মায়ের কথা—‘কে নিল খোকার ঘুম চুরায়ে/ কোনোমতে দেখা তার, পাই যদি একবার/সব লুঠিব তার, ভাবিতে হবে না আর খোকার চোখে ঘুম হারালে’। ঘুমচোরা ধরা পড়ুক, ঘুম ফিরে আসুক সবার জীবনে।