গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত প্রথম আলোর সুধী সমাবেশের অনুষ্ঠান শেষ না হতেই খবর পাওয়া গেল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গোলযোগ হয়েছে। কিন্তু সেই গোলযোগ যে এতটা ভয়ংকর হবে কেউ ভাবতে পারেননি।
জানা গেল, বাসের চালক ও সহকারীর সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর আসনে বসা নিয়ে বচসা হয়। বাসটি ক্যাম্পাসের পাশে বিনোদপুর স্টেশনে থামতে ফের দুই পক্ষের বিতণ্ডা হয়। এর মধ্যে সেখানকার এক দোকানদার ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হলে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রথমে কথা-কাটাকাটি ও পরে তা দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ রূপ নেয়। একে অপরের ওপর হামলা চালান, দোকানপাট, পুলিশ বক্স, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। অনেকক্ষণ পর পুলিশ এসে দুই পক্ষের মাঝখানে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলেন না। রাত সোয়া এগারোটা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দোকানদারেরা যখন সদলবলে তাঁদের ওপর বৃষ্টির মতো ইট নিক্ষেপ করছিল, পুলিশ তাদের বাধা দেয়নি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বাজারের দিকে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ের পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। গ্রামবাসী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী আহত হন। প্রথমে তাঁদের ক্যাম্পাসে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অনেকের অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেদিন রাতে আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল শহীদ মীর কাইউম আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসে; যদিও সেখানে তখন বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন খুবই কম। স্নাতকোত্তর গবেষকেরাই বেশি থাকেন। মধ্যরাতে ফিরতে গিয়ে দেখি ক্যাম্পাসমুখী সব সড়ক বন্ধ। মোড়ে মোড়ে পুলিশের কঠোর প্রহরা। পরিচয় দিতে পুলিশ সদস্যরা বিকল্প পথে ক্যাম্পাসে যেতে বললেন। ডরমিটরিতে যখন ঢুকি, চারদিকে সুনসান।
সকালে উঠে দেখলাম ছাত্ররা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন। প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। একপর্যায়ে উপাচার্যের ভবনের সামনে তাঁরা অবস্থান নেন। উপাচার্য আলাপ করতে চাইলে ছাত্ররা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, আগে হামলার বিচার করতে হবে। ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে। হামলাকারী ও পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৪০০ থেকে ৫০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নামে মামলা করে। পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তারও করে। পরে পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করে। কোনো মামলায় সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে আসামি করা হয়নি।