পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক বুঝেছেন একাত্তরের যুদ্ধে তাদের বিজয় অসম্ভব। ভিয়েতনামের কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু তিনি সাংবাদিকতার লোক, ভিয়েতনামের খবর রাখতেন নাÑ এমন তো হওয়ার নয়। যুদ্ধ চলছিল গেরিলা পদ্ধতিতে। সিদ্দিক সালিক জানতে পেরেছেনÑ তাদের শত্রুপক্ষ অত্যন্ত উন্নতমানের কলাকৌশল রপ্ত করে ফেলেছে, যন্ত্রপাতিও উদ্ভাবন করেছে। তারা ব্রিজ, রেলপথ, বিদ্যুৎ স্থাপনা উড়িয়ে দিচ্ছে; বুবি ট্র্যাপ পেতে রাখছে; মস্ত মস্ত জাহাজ ডুবিয়ে ছাড়ছে। বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য টর্চে করে ব্যাটারি নিয়ে যাচ্ছেÑ যখন সেটি জানাজানি হয়ে গেছে, তখন ব্যাটারি বহন করতে শুরু করেছে বাঁশের ভেতরে পুরে। তা ছাড়া কে যে গেরিলা, কে কৃষকÑ তা বোঝার কোনো উপায় ছিল না। গেরিলারাই হয়তো কৃষক সেজে চাষবাস করছে, দেখা যেত অথবা বিপদ দেখলে হাতের স্টেনগানটি ক্ষেতের মধ্যে ফেলে দিয়ে নিরীহ কৃষকের মতো চাষবাসের কাজ শুরু করে দিত।
দেখা গেছে, অতিশয় কাহিল এক বৃদ্ধ ব্যাগভর্তি তরকারি নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু চ্যালেঞ্জ করলে ধরা পড়ত তার ব্যাগের ভেতরে ফিউজ রয়েছে সাজানো। নৌকা যাচ্ছে মৌসুমি ফল নিয়ে। তবে ভেতরে লুকানো মাইন ও গ্রেনেড। মসজিদের ইমামের আবাস কিংবা শান্তি কমিটির মেম্বারের বাড়িÑ সব জায়গাতেই মুক্তিবাহিনীর আশ্রয় ছিল। তার হিসাবমতো ৩০ হাজার মানুষকে নিয়মিত যুদ্ধ করার জন্য ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল, ৭০ হাজারকে নিয়োজিত করা হয়েছিল গেরিলা যুদ্ধে। সবচেয়ে বড় কথাÑ যোদ্ধাদের মনোবল ও প্রণোদনা ছিল অদম্য; যেটা তিনি দেখেছেন তার নিজের লোকদের মধ্যে বাড়ছে তো নয়ই, বরং কমছে।