প্রতিটি ধর্মই শান্তি আর সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। শান্তির জনপদ পঞ্চগড় ঐতিহ্যগতভাবে শান্তি ও ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীকরূপে বিবেচিত হয়ে আসছে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কিছু উগ্রধর্মান্ধরা আহমদিয়াদের বার্ষিক জলসা বন্ধ করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এবং গুজব ছড়িয়ে আহমদিয়াদের ওপর আক্রমণ চালায়। যেখানে বিগত ৭২ বছর যাবত এই অঞ্চলে আহমদিয়া কোন ইস্যুই ছিল না সেখানে গত কয়েক বছর ধরে এই ইস্যু তুলে এলাকায় অশান্তি এবং জনমনে আতংক সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রায় দু’শ বাড়িঘর লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করে পরিবারগুলোকে করা হয়েছে নিঃস্ব। বর্তমান পুরো গ্রাম যেন যুদ্ধবিধস্ত কোন এলাকা। সন্ধ্যা হতেই রাস্তাঘাট জনমানবশূন্য। সবার মাঝে এক আতংক বিরাজ করছে।
আমরা বরাবরই লক্ষ্য করে আসছি, একটি মহল বরাবরই শান্তিময় সমাজকে অশান্ত করে তোলার কাজে ব্যস্ত থাকে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে তারা থাকে সদা তৎপর। অথচ প্রত্যেক ধর্মের মূল মর্মবাণী হল-শান্তি ও মানুষের কল্যাণ। ধর্ম মানুষকে সম্প্রীতি ও পরমত সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।
বিভিন্ন সময়ে ধর্মকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল ও সুযোগসন্ধানী একটি চক্র বরাবরই পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চালায়। সম্প্রতি একই অবস্থা আমরা লক্ষ্য করেছি পঞ্চগড়ে। ধর্মের নাম দিয়ে সেখানে যে নৈরাজ্য করা হয়েছে তা কখনই ধর্ম হতে পারে না।
কেননা ইসলাম এমন এক শান্তিপ্রিয় ধর্ম যেখানে সকল ধর্মের অনুসারীদের সম্মানের শিক্ষা দেয়। প্রেমপ্রীতি, সৌহার্দ্য আর শান্তি ও সম্প্রীতির এক পরিমণ্ডল বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত করাই ইসলামের মূল লক্ষ্য। অন্য কথায়, আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বস্ততার হক আদায়ে এবং তার সৃষ্টির প্রতি দায়বদ্ধ আচরণের মাধ্যমে এ বিশ্ব এক স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করা।
ধর্মীয় বিষয়ে একে অপরের সাথে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। তাই বলে তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে প্রমাণ করবো আমিই শ্রেষ্ঠ? অবশ্যই না। কেননা প্রকৃত ইসলামের আকর্ষণীয় শিক্ষার প্রচার ও প্রসার জোর-জবরদস্তি এবং বল প্রয়োগে নয় বরং সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির দ্বারা মানুষের হৃদয় জয় করার মাধ্যমে সম্ভব। বল প্রয়োগ করলে অন্যের অধিকার যেমন দেয়া যায় না, তেমনি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভও এর দ্বারা সম্ভব নয়।