‘গণধোলাই’ একটি ‘দশে মিলি করি কাজ’ টাইপের ‘প্রকল্প’। ‘হাতের সুখ’ নেওয়ার ইচ্ছা আছে, কিন্তু সাহসে কুলোচ্ছে না? জাস্ট একজোট হয়ে যান; দল বেঁধে যে কাউকে ধরে পিটুনি দিন। ‘দশের লাঠি’তে ‘একের’ যা হয় হোক, চাপ নেবেন না; কারণ খুন হয়ে গেলেও দায়টা কারও একার ঘাড়ে চাপবে না। পুরো বিষয়ই অ্যানোনিমাস হয়ে যাবে। মামলা হলেও তার জোর থাকবে না।
গণধোলাই এমন এক নিরাপদ জিনিস যে, এক ধমকে কাপড় নষ্ট করে ফেলা লোকটিও ঘটনার বিন্দুবিসর্গ না জেনেই স্রেফ ‘হাতের সুখ’ নিতে কিলঘুষি সহযোগে তাতে নিশ্চিন্তে শরিক হতে পারেন। কারণ, এ দেশে চোর বা ছেলেধরা সন্দেহে কেউ জনতার হাতে ধরা পড়লে পুলিশ ডাকার আগে একপ্রস্থ বেদম মার দেওয়ার রেওয়াজ আছে।
কারণ ‘পুলিশকে বলে লাভ নেই’—এই যুক্তির ওপর ভর করে এ দেশের তাৎক্ষণিক বিচারপ্রত্যাশী পাবলিক নিজেরাই বিচারক, নিজেরাই জল্লাদ।
কথা ছিল, সমাজ যত উন্নত হবে, এই ধরনের হাতের সুখ নেওয়ার মনোবৃত্তি ক্রমে লোপ পাবে। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো সেই গণপিটুনি বা মব লিঞ্চিং এখন বাস্তব জীবনের দেয়াল টপকে এমন এক ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় ঢুকে পড়েছে, যে দুনিয়ায় গণপিটুনিতে শরিক হওয়ার আরামই আলাদা। এখানে ‘মাইর’ হয়, শব্দ হয় না। এখানে যে কারও ওপর যেকোনো সময় ঝাঁপিয়ে পড়া যায়। তার জন্য হাত–পা চালাতে হয় না। খালি আঙুলের টেপাটিপিতেই ভার্চ্যুয়াল ‘শাহিন’রা যে কাউকে ‘নটীর পোলা’ বলে ‘ধরে ফেলতে’ পারে।
ধরা যাক, আপনি খুব নামীদামি ব্র্যান্ডের একটা রেস্টুরেন্ট থেকে চিকেন বিরিয়ানি আনালেন। প্যাকেট খুলে অর্ধেক খাওয়ার পর আপনার কোনো কারণে মনে হলো, বিরিয়ানিতে মুরগির মাংসের বদলে কাকের মাংস দেওয়া হয়েছে। আপনি রেগে কাঁই হলেন। দোকানের লোককে ডাকলেন। ‘তুই ছেলেধরা!’ বলে যেভাবে কেউ একজন আরেকজনকে ধমকাতে শুরু করে; সেই একই কায়দায় আপনি রেস্টুরেন্টের লোককে বলতে লাগলেন, ‘আপনারা কাকের মাংস দিয়েছেন!’ সন্দেহভাজন লোকটি যেভাবে ‘আমি ছেলেধরা না! আমি ছেলেধরা না!’ বলে চেঁচাতে থাকে, সেভাবে রেস্টুরেন্টের লোকও আপনাকে বলতে লাগল, ‘ওটা কাকের মাংস নয়, ওটা মুরগির মাংস।’