হালিমা আক্তারের মা হওয়ার দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। সন্তান পেটে আসার পর থেকে তিনি আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এখনো জানেন না তাঁর স্বাভাবিক প্রসব হবে কি না। অথবা অস্ত্রোপচার হলে সেটা কোথায় বা কীভাবে হবে? নতুন মা হতে যাওয়া যেকোনো নারীর মনে এ প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু হালিমা আক্তারের পরিস্থিতি ভিন্ন। হাসপাতালে সেবা নিতে গিয়ে ধমকের সুরে শুনতে হয়েছে, আপনি কেন বাচ্চা নিতে গেলেন? আপনার ওজন কীভাবে নেব? প্রসব ব্যথা উঠলে বুঝতে পারবেন?
হালিমা আক্তার একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী, হুইলচেয়ার চলাফেরা করেন। মা হতে গিয়ে হাসপাতালে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হাসপাতালে গেলে নানা প্রশ্ন শুনে মনে হয়েছে, আমি সন্তানের মা হতে চেয়ে অন্যায় করেছি। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার আগে অবশ্যই অন্যদের মতামত নিতে হতো।’
অনেক হাসপাতাল ঘুরে গতকাল বুধবার রাজধানীতে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ বা ওজিএসবির হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন হালিমা আক্তার।
হালিমা আক্তার নিজেও সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স। সেখানে কিশোরী কর্নারে কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বলে তাঁকে নিজের হাসপাতালে না হলেও অন্য কয়েকটি হাসপাতালে সেবা নিতে গিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তিনি যেসব হাসপাতালে গিয়েছেন, সেখানকার চিকিৎসক, নার্স সবাই দ্বিধাগ্রস্ত। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরছেন হালিমা আক্তার।
হালিমা আক্তার বলেন, ‘সেবা নিতে গেলে প্রথমেই চোখ কপালে তুলে প্রশ্ন করেন—ওহ, আপনি গর্ভবতী? তারপর কেন এ ঝামেলা বাড়ালাম, বাচ্চাকে কে দেখবে, হাসপাতালে অন্য নারীকে সঙ্গে না নিয়ে স্বামীকে কেন নিয়ে আসছি—এ ধরনের হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে। নিজের হাসপাতালে অবকাঠামোগত সমস্যার সম্মুখীন হলেও এমন বাজে প্রশ্ন শুনতে হয়নি।’
মা হতে গিয়ে হাসপাতালের বিব্রতকর পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে হালিমা বললেন, ‘প্রস্রাব পরীক্ষা করা, আলট্রাসনোগ্রাম করার সংগ্রাম তো আছেই। হাসপাতালে প্রতিবন্ধীবান্ধব টয়লেট বা শৌচাগার নেই। হুইলচেয়ারে কোথাও বসে পরীক্ষার জন্য প্রস্রাব দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালের অভ্যর্থনা বা টেবিলগুলো এত উঁচু যে হুইলচেয়ারে বসে সরাসরি কথাও বলা যায় না। টিকিট কাটা থেকে শুরু করে প্রতি পদে পদে বাধা। সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদেরও গোপনীয়তার যে একটি বিষয় আছে, তা বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন সেবাদানকারী ব্যক্তিরা। হাসপাতালের বিছানাগুলোও উঁচু। র্যাম্প থাকলেও তা প্রায় সময়ই নিয়মানুযায়ী বানানো হয় না, ফলে তা আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।’