ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা মূলত দুটি—প্রতিস্থাপন ও ডায়ালাইসিস। কিন্তু দেশের কিডনি রোগীদের চিকিৎসাসুবিধা অপ্রতুল। প্রতি ১৫ লাখ মানুষের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাত্র একজন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৫ শতাংশ ডায়ালাইসিস সুবিধা পেয়ে থাকেন। চিকিৎসক ও দাতার অভাব এবং আইনি জটিলতায় প্রতিস্থাপনের সুযোগও সীমিত। সব মিলিয়ে ভালো নেই দেশের কিডনি রোগীরা।
দেশের একমাত্র বিশেষায়িত কিডনি হাসপাতাল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস আ্যান্ড ইউরোলজিতে (কিডনি হাসপাতাল) সরকারিভাবে ডায়ালাইসিস সেবা একেবারেই অপ্রতুল। অন্যদিকে প্রতিস্থাপন সেবা নেই বললেই চলে। দেশে ন্যূনতম সেবাটুকুও বেসরকারি প্রতিষ্ঠাননির্ভর। ফলে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ কিডনি রোগী থেকে যান ডায়ালাইসিস সেবার বাইরে। এর সঙ্গে প্রতিবছর নতুন করে যুক্ত হয় আরও ১০ হাজার রোগী।
এ বিষয়ে কিডনি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক বাবরুল আলম বলেন, ডায়ালাইসিস সেবা সম্প্রসারণে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যার ২২ ইউনিট এবং জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার ৪৪ ইউনিট (মোট ১ হাজার ৫৪০ শয্যা) সম্প্রসারণ প্রকল্প চলমান। এ ছাড়া কিডনি হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে দুটি কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মরণোত্তর কিডনি দানের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন বাড়ানো সম্ভব।
ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, দেশের সব কিডনি রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবার আওতায় আনতে স্বাস্থ্য বাজেট তিন গুণ বাড়াতে হবে।
বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৭ শতাংশ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে ভুগছেন। কিডনি রোগের পাঁচটি পর্যায় রয়েছে। এর সর্বশেষ পর্যায়ে হলো কিডনি বিকল, যার চিকিৎসা ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন। ইউনাইটেড স্টেটস রেনাল ডেটা সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০-২০২০ সালের মধ্যে এই রোগী বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে ১০ হাজার ৮৪১ জন কিডনি রোগে মারা যান। ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘নেফ্রোলজি ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ পুস্তকের নেফ্রোলজি ইন বাংলাদেশ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, কিডনি বিকল রোগীদের মাত্র ৫ শতাংশ প্রতিস্থাপনের সুযোগ পান।
রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্পের আওতায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১৬ সালে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সেন্ডরের সহায়তায় ডায়ালাইসিস সেবা চালু হয়। এ দুটি সেন্টারে বছরে প্রায় ৩০ হাজার ডায়ালাইসিস সেশন পরিচালিত হচ্ছে। তবে সরকারের সঙ্গে চুক্তি জটিলতার কারণে কিছুদিন পরপর এই প্রতিষ্ঠান ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ রাখে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা।
বিশ্বে প্রতি ১০ জনে একজন ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে ভুগছেন। বয়স্কদের মধ্যে এই হার আরও বেশি। ৬৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনে একজন পুরুষ এবং চারজনে একজন নারী কিডনি রোগে ভুগছেন। ৭৫ বছর বা তদূর্ধ্ব ব্যক্তিদের অর্ধেকই কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনি রোগ উপসর্গবিহীন। কিডনির কার্যক্ষমতা প্রায় ৯০ শতাংশ হ্রাস পেলে উপসর্গ প্রকাশ পায়।
বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৬ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব নেফ্রোলজির উদ্যোগে প্রতিবছর মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব কিডনি দিবস’ পালিত হয়ে আসছে।