শিক্ষাঙ্গন স্বাভাবিক রাখতে হবে

যুগান্তর মোনায়েম সরকার প্রকাশিত: ০৯ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩৮

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী এক নবীন ছাত্রীর সঙ্গে যে আচরণ করেছিল, তার নিন্দার ভাষা জানা নেই। অনেক ঘটনাই ঘটে। সবকটা হয়তো মনে তেমন দাগ কাটে না বা আলোড়ন সৃষ্টি করে না। কিন্তু কোনো কোনো ঘটনায় মনে হয়, লজ্জায় মাথা কাটা গেল। তেমন একটি ঘটনা ঘটানো হয় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিবাসে।


সেটি এতই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যে, হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা দ্রুত যথাযথ তদন্তের ব্যবস্থা করেন; কাদের নিয়ে তদন্ত পরিচালনা করতে হবে, সে নির্দেশনা দেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ারও ব্যবস্থা করেন। সে অনুযায়ী তদন্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও হাইকোর্টের উদ্যোগ দেখে নড়েচড়ে বসে। ছাত্রলীগও তাদের কিছু কর্মীর অপরাধমূলক আচরণের বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেয়। যা হোক, নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট উপস্থাপন করা হলে তার ভিত্তিতে আদালত অভিযুক্ত সাব্যস্ত পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ দেন। তারা ওই ছাত্রীনিবাসের প্রভোস্টকেও প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা দ্রুতই কার্যকর করা হয়েছে। হাইকোর্ট বেঞ্চ তার পর্যবেক্ষণে ছাত্ররাজনীতির অবনতিশীল ধারায় উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন এবং স্মরণ করেছেন অতীতে এর গৌরবময় ভূমিকার কথা।


শুধু ছাত্রসমাজের অধিকার আদায় নয়; ব্যাপক মানুষের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনেও এককভাবে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল বিরাট। এটি আমরা বারবারই স্মরণ করি যে, মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র সংগঠনগুলোর কত তরুণ দেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে। ছাত্রলীগের জন্ম হয়েছিল আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠারও আগে। এ সংগঠনের মধ্য থেকে কত জাতীয় নেতার জন্ম হয়েছে, যারা এ অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিক চেতনা গঠনে ও ইতিহাসের মোড় পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় এ সংগঠন স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে অবশ্য দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। তাতে আমাদের রাজনৈতিক অগ্রগতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে বিষয়ে আলোচনা অবশ্য এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। ব্যথিতচিত্তে এ নিবন্ধ লিখছি এবং স্মরণ করছি এ সংগঠনের গৌরবময় অতীতের কথা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একশ্রেণির ছাত্রলীগ কর্মী যা করছে, তাতে ছাত্রলীগ শুধু নয়-মূল সংগঠনও কি ভাবমূর্তির সংকটে পড়ছে না? উচ্চ আদালতকে অবশ্যই ধন্যবাদ দেব ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছেন বলে। চলমান ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে তারা যে মন্তব্য করেছেন, সেগুলোও প্রণিধানযোগ্য। সমাজের সচেতন অংশ হিসাবে ছাত্রদের রাজনীতির অধিকার অবশ্যই থাকবে। এটি তাদের সাংবিধানিক অধিকারও বৈকি। কিন্তু সেই অধিকারের নামে যদি একশ্রেণির ছাত্র বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে, তবে সেটি দুর্ভাগ্যজনক। এজন্য সমাজের ঘৃণা শুধু নয়, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের তরফ থেকে তাদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থারও মুখোমুখি হতে হবে।


ভালো হতো, যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও যেসব কলেজে ছাত্ররাজনীতি চলছে, সেসব কর্তৃপক্ষ নিজেরাই শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করতে কিংবা তাতে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারত। সেটি অনেক ক্ষেত্রেই তারা পারছেন না বলে উচ্চপর্যায় থেকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনভিপ্রেত ঘটনায় আমরা উচ্চ আদালতকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। এটি সত্যি বলতে উচ্চ আদালতের নিয়মিত কাজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব ক্যাম্পাসে ও ছাত্রাবাসে সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করা। সেজন্য হাউজ টিউটর ও প্রভোস্ট রয়েছেন এবং সর্বোপরি রয়েছেন প্রক্টর। তারা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে ওইসব ঘটনার নিষ্পত্তি শুরুতেই হতে পারে। কেবল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, অন্য কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, যার দ্রুত নিষ্পত্তি হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের একশ্রেণির নেতাকর্মীর এত দাপট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, শিক্ষা প্রশাসনও অনেক ক্ষেত্রে তাদের হাতে জিম্মি। তারাও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন, যদিও আইনগত অধিকার পুরোপুরিই তাদের রয়েছে। শিক্ষকদের মধ্য থেকে যারা প্রশাসনিক দায়িত্ব নেন, তারা কেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারেন না, তার নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। সেই কারণ অনুসন্ধান করাও প্রয়োজন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us