করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বাসায় চিকিৎসা নিয়েছে, তাদের তুলনায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার বেড়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে আগে যাদের ডায়াবেটিস ছিল না, তাদের মধ্যে প্রতি এক হাজার জনে ১০ জন প্রতি মাসে নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এই তথ্য জানা গেছে। এর কারণ অনুসন্ধানে আরেকটি গবেষণা শুরু হয়েছে। আইসিডিডিআরবির গবেষণার তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, আগে থেকে যারা ডায়াবেটিক রোগী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সেরে ওঠার পর ওষুধে তাদের ডায়াবেটিস আর নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে তাদের ইনসুলিন নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া করোনার ধকল কাটিয়ে ওঠার পর অনেকে নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে। কারো কারো মানসিক অবসাদ ও স্মৃতিশক্তি লোপের সমস্যা বেড়েছে। কাজে মনোযোগ দিতে তাদের সমস্যা হচ্ছে।
আইসিডিডিআরবির এই গবেষণার কথা এমন একসময় জানা গেল, যখন দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের তিন বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। আগামীকাল ৮ মার্চ পূর্ণ হবে তিন বছর। ২০২০ সালের এই দিনে দেশে মানবদেহে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত তিন বছরে ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭১ জনের দেহে এই ভাইরাসবাহী কভিড-১৯ রোগ শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে ২৯ হাজার ৪৪৫ জন। কভিডে আক্রান্ত হয়ে যারা বিভিন্ন হাসপাতাল বা বাসায় চিকিৎসা নিয়েছে, তারা এখনো ভুগছে নানা জটিলতায়।
আইসিডিডিআরবির গবেষণা তথ্য বলছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ৭০ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। যারা বাসায় চিকিৎসা নিয়েছে, তাদের এই হার ৫০ শতাংশ। আগে যাদের ওষুধে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ছিল, তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশের এখন ইনসুলিন নিতে হচ্ছে। আর যারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছে, তাদের মধ্যে ২৭ শতাংশের ইনসুলিন লাগছে। এ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে আগে যাদের ডায়াবেটিস ছিল না, তাদের মধ্যে প্রতি এক হাজার জনে ১০ জন প্রতি মাসে নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে।
আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. ফারজানা আফরোজ কালের কণ্ঠকে বলেন, কভিডের ঘোর প্রাদুর্ভাবের সময় যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিল বা বাসায় চিকিৎসা নিয়েছে, এমন ৩৬২ জন রোগীর ওপর এই গবেষণা চালানো হয়।
তিনি বলেন, ‘এসব কভিড রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পর এক মাস, তিন মাস ও পাঁচ মাস পর মোট তিনবার তাদের পরবর্তী শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ (ফলোআপ) করা হয়। ফলোআপের মাধ্যমে দেখেছি তাদের কী কী সমস্যা রয়ে গেছে, যা কভিডে আক্রান্ত হওয়ার আগে ছিল না। বাড়ির চেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। এর কারণ খুঁজে দেখতে নতুন করে আরেকটি গবেষণা চালানো হচ্ছে।’
মোট শনাক্তের ৫১ শতাংশ ঢাকার
দেশে এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ ৫২ হাজার ২০৪ জন বা ৫১ শতাংশ রোগী ঢাকার। এরপর চট্টগ্রামে এক লাখ ২৯ হাজার ৩৬০ জন বা ৬ শতাংশের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সবচেয়ে কম তিন হাজার ৩০৮ জন শনাক্ত হয় বান্দরবান জেলায়, যা মোট শনাক্তের ০.১৬ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২০ সালে করোনা শনাক্ত হয় পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ৫১০ জনের। ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৯ জনের। সে বছর ২৮ জুলাই সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ২০২২ সালে শনাক্ত হয় চার লাখ ৫১ হাজার ৫৮৬ জনের। চলতি বছরে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৭০৪ জনের। প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ১৩.৩১ শতাংশ।
পুরুষের মৃত্যু ৬৩.৮ শতাংশ, নারীর ৩৬.১৯ শতাংশ : করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু হয় ২০২০ সালের ১৮ মার্চ। মোট মারা গেছে ২৯ হাজার ৪৪৫ জন। মৃত্যুর হার ১.৪৪ শতাংশ। পুরুষ ১৮ হাজার ৭৮৯ জন বা ৬৩.৮১ শতাংশ, নারী ১০ হাজার ৬৫৬ জন বা ৩৬.১৯ শতাংশ।
মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বক্ষব্যাধি, হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, গ্যাস্ট্রোলিভারজনিত রোগ, স্ট্রোক, নিউরোলজিক্যাল রোগ, থাইরয়েডজনিত রোগ, বাতজনিত সমস্যা, রক্তজনিত রোগ, ক্যান্সার ও মানসিক সমস্যাজনিত রোগে ভুগছিল।