মোছা. রওশন আরা বেগম। রক্ত শূন্যতা, মাথা ব্যথা, মাংসপেশি ও শরীরে পানি নামাসহ নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। ছয় ছেলে-মেয়ের প্রায় সবাই নিজের সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। রওশন আরার প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। দাম বাড়ায় এখন সেই ওষুধ কিনতে লাগে সাড়ে সাত হাজার টাকা। এতদিন ওষুধের টাকা মেঝো ছেলে দিত। কিন্তু করোনায় মেঝো ছেলের ব্যবসায় ধস নামে। এরপর থেকে বড় মেয়ে ওষুধ কিনে দিচ্ছেন। ফলে তার পরিবারে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।
রওশন আরা বলেন, একদিন যদি ব্যথার ওষুধ না খাই, ব্যথায় দাঁড়াতে পারি না। শুনছি ওষুধের দাম বাড়ছে। ওষুধ না খাওয়া লাগলে ভালো হত।
তার মেয়ে মোছা. শিউলী বেগম বলেন, সব ধরনের ওষুধের দামই বেড়েছে। সরকার কেন নিয়ন্ত্রণ করছে না এসব। আমাদের মতো মানুষের জন্য এটা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে মায়ের ওষুধ কিনতে যে টাকা লাগত, এখন তার অনেক বেশি লাগছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে কিন্তু আয় তো বাড়েনি।
করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে নিত্যপণ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ওষুধের দাম। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, কাঁচামালের সংকটসহ নানা কারণে দফায় দফায় দাম বেড়েছে ওষুধের। সরকার ৫৩ ধরনের ওষুধের দাম বেঁধে দিলেও তা মানা হচ্ছে না। ওষুধ কোম্পানিগুলো নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। ওষুধশিল্প ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানি করতে বাড়তি খরচ লাগছে। সাথে উৎপাদন খরচ মিলে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর তথা সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে নজর দেওয়া দরকার। যেভাবে ওষুধের দাম বাড়ছে, তা নিম্ন ও নিন্মমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এখনই এটা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। পাশাপাশি দেশে ওষুধের কাঁচামাল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হবে না। এতে ওষুধ তৈরিতে খরচ কমবে, দামও সহনীয় থাকবে।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর মিডফোর্ট, কাকরাইল, শাহবাগ, সাইন্সল্যাব, ধানমন্ডিসহ বেশিরভাগ ওষুধের দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় লেগেই আছে। রোগী নিজে কিংবা রোগীর স্বজনরা ওষুধ কিনছেন।
বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। অনেক ফার্মেসি আবার মানুষ বুঝে গায়ের দামের চেয়ে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করছেন। দাম বাড়তি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দোকানিরা জানান, এখন সব ওষুধের দাম বেশি। তাদের কিছু করার নেই।
বেশিরভাগ ক্রেতাকে ওষুধের দাম নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায়। ওষুধ কিনতে আসা মো. মোস্তফা কামাল বিবার্তাকে বলেন, মেয়ের ঠান্ডা, জ্বর, কাশি হয়েছে। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়েছে। সব ওষুধের দাম বেশি। আগে যে প্যারাসিটামল সিরাপ ২০ টাকা দিয়ে কিনেছি, এখন তা বেড়ে ৩৫ টাকা হয়েছে। শুধু প্যারাসিটামল না, যে ওষুধগুলা কিনলাম সব ওষুধের দামই বেড়েছে। কি করার আছে বলেন, কিনতে তো হবেই। এছাড়া তো কোনো উপায় নেই।
তিনি বলেন, ওষুধের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে আমাদের মতো মানুষের বেঁচে থাকায় মুশকিল হয়ে যাবে। দ্রুত ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা না হলে সাধারণ মানুষের পক্ষে এত দাম দিয়ে ওষুধ কেনা সম্ভব হবে না।