পূর্ববঙ্গ থেকে যখন স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলা হয় তখন যুক্তি হিসেবে পাকিস্তানে দুই অংশের ভেতরকার আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতা ও দূরত্বের যুক্তি তো থাকেই, ১৯৪০ সালে গৃহীত যে লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৭-এ পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা সেই প্রস্তাবের কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। লাহোর প্রস্তাবে পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে যে, প্রস্তাবিত রাষ্ট্রটি এককেন্দ্রিক হবে না, এর থাকবে দুটি অংশ, একটি ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিমে অপরটি উত্তর-পূর্বে; দুটি অংশই হবে ‘স্বাধীন’। জোর দিয়েই বলা হয়েছিল যে, constituent states shall be autonomous and sovereign। অর্থাৎ তারা কেবল যে স্বায়ত্তশাসিত হবে তা-ই নয়, তাদের ‘সার্বভৌমত্ব’ও থাকবে। তখন পাকিস্তান ছিল একটা ধারণা।
কিন্তু ১৯৪৬ সালে যখন দেখা গেল ধারণাটির বাস্তবায়ন ঘটতে যাচ্ছে তখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ইচ্ছানুসারে এবং তার নিকটস্থ ব্যক্তিদের সমর্থন অনুযায়ী ব্যবস্থাপক পরিষদসমূহের সদস্যদের এক সম্মেলনে প্রস্তাবটি সংশোধন করে নিয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জায়গাতে একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের কথা বসিয়ে দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করেন। পাকিস্তানের জন্য জিন্নাহ সাহেব প্রাণপাত করছেন, অথচ তিনি শাসনকর্তা হবেন শুধু একটি অংশের, এটি কেমন কথা। তিনি অখণ্ড পাকিস্তান চাইলেন, নেহরু যেমন চাইছিলেন অখণ্ড ভারত। আদি প্রস্তাবের সংশোধনীটি তিনি উত্থাপন করিয়ে নিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে দিয়েই, যিনি তখন কেবল যে বাংলার প্রধানমন্ত্রী তাই নন ভারতবর্ষে একমাত্র পাকিস্তানপন্থি প্রধানমন্ত্রীও বটে। ইতিহাসের কৌতুক এখানেও যে, মূল নায়ক, কুশলী জিন্নাহ আদি প্রস্তাবটি উত্থাপন করিয়েছিলেন যাকে দিয়ে তিনি, এ কে ফজলুল হকও ছিলেন বাংলার তখনকার প্রধানমন্ত্রী, এবং যাকে দিয়ে তিনি সেই প্রস্তাবকে সংশোধনের মাধ্যমে কিম্ভূতরূপে বিকৃত করার প্রস্তাব উত্থাপন করালেন সেই সোহরাওয়ার্দীও ছিলেন বাংলারই প্রধানমন্ত্রী।