প্রাথমিকে বৃত্তি পাওয়ার বিষয়টিকে শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবক-আত্মীয়স্বজনরা মর্যাদার বিষয় হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন।
এ কারণে বৃত্তি পাওয়ার জন্য শিক্ষার্র্থীরা বিশেষভাবে অধ্যয়নে মনোযোগী হয়। এবার প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তের পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে একবার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল।
এবার এ পরীক্ষার ফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা স্থগিত করায় জনমনে আরও বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, কয়েকটি উপজেলায় শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে কোড নম্বরে ভুল ধরা পড়ে। ফলাফল নিয়ে ভুল ও অসংগতির খবরও পাওয়া গেছে। জানা যায়, ঘোষিত ফলাফলে যেসব শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল, তারা এবং তাদের অভিভাবক ও স্বজনরা তা উদ্যাপন করেছেন। অনেকে ফেসবুকেও এই অর্জনের খবর প্রচার করেছেন। ফল স্থগিতের ঘোষণায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক-স্বজনদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছে, এর প্রতিকার কী? পুনঃপ্রকাশিত ফলাফলে যে পরিবর্তন আসবে, তাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া দূর করতে কর্তৃপক্ষের একটি বিবৃতি প্রদান করা উচিত। ইতোমধ্যে জেলা শিক্ষা অফিসের ভুলের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের পর জেলা শিক্ষা অফিসে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে কোড দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষকরা সেই খাতা মূল্যায়ন করেন। ফলে কার খাতা কোনটি, তা বোঝা যায় না। কিন্তু মূল্যায়নের পর প্রাপ্ত নম্বর কোড অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন নম্বরে যোগ হয়। শেষের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডিকোডিং। এই কোডিং ও ডিকোডিং প্রক্রিয়ায় ভুল হয়েছে। দেশের কয়েকটি উপজেলায় সব শিক্ষার্থীকে একই কোড নম্বর দেওয়া হয়েছে বলে ডিপিই-এর কম্পিউটার সেলে ধরা পড়ে। এ কারণে সারা দেশের ফল পুনরায় যাচাই করার জন্য ফল স্থগিত করা হয়। এ ধরনের ত্রুটিকে বড় ত্রুটি হিসাবে বিবেচনা করা দরকার। একই সঙ্গে কেন এমন ত্রুটি হলো, তা খতিয়ে দেখতে হবে। তাড়াহুড়ো করে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে দেশের অনেক খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ বিবৃতি দিয়েছিলেন। আমরা মনে করি, বিবৃতিটি বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বৃত্তির অর্থের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে। আগে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পাওয়াদের মাসে ২০০ টাকা করে দেওয়া হলেও ২০১৫ সাল থেকে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ গ্রেডে মাসে ১৫০ টাকার পরিবর্তে ২২৫ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া উভয় ধরনের বৃত্তিপ্রাপ্তদের প্রতিবছরে ২২৫ টাকা করে এককালীন দেওয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি, প্রাথমিক বৃত্তিসহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষবৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি বৃত্তির অর্থের পরিমাণ আরও বাড়ানো দরকার।
শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতা, গাফিলতি ও অবহেলার বিষয়টি অভিভাবক মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। পাঠ্যপুস্তকে ভুল ও মানহীন বই প্রকাশের বিষয়টিও বারবার আলোচনায় আসছে। শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ভুল ও মানসম্পন্ন বই পেতে পারে, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আজ যারা শিক্ষার্থী, আগামী দিনে তারাই দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করবে। সরকার শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য বেশকিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে বই উৎসব অন্যতম। শিক্ষার্থীরা যদি সময়মতো নির্ভুল ও মানসম্পন্ন বই না পায়, তাহলে সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগগুলোর সুফল পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।