বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ পথপরিক্রমার সূচনা ও মূলে রয়েছে একুশের আত্মদান। যার প্রতীক শহীদ মিনার। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে ’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকর্মীদের শহীদ হওয়ার ঘটনা এবং শহীদ মিনার বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের সব সংগ্রামের অনুপ্রেরণার অসীম উৎস। এ কারণেই শহীদ মিনার শত্রুপক্ষ তথা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছে বারবার।
২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদদের লাশ তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। লাশগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলে এবং গভীর রাতে গোপনীয়তার সঙ্গে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করে পুলিশ। শহীদের লাশকে কেন্দ্র করে যেন আন্দোলন আরও তীব্রতা না পায় এবং রক্তাক্ত অধ্যায়ের প্রামাণ্য (ঊারফবহপব) দ্রুত আড়াল করাই ছিল এর লক্ষ্য। তখন বাংলাভাষার দাবির আন্দোলনকারীদের মধ্যে আওয়াজ ওঠে ‘শহীদ স্মৃতি অমর হোক’। এই আওয়াজ ও প্রাণ বিসর্জনের শোককে আরও নির্দিষ্ট করা এবং শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতাকে মূর্ত রূপ দিতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১২ নম্বর ব্যারাক সংলগ্ন ছাত্রদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থানটিতে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা করেন মেডিকেলের ছাত্ররা। প্রথম শহীদ মিনারের প্রথম নকশাটি করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র বদরুল আলম। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের লেখায় জানা যায়, মেডিকেলের ছাত্ররা শহীদ মিনারের নকশা করার জন্য দায়িত্ব দেন তখনকার ছাত্র ডা. বদরুল আলমকে। কারণ বদরুল আলম ভালো আঁকতে পারতেন। বদরুল আলম ২২ ফেব্রুয়ারি একটি নকশা করেন। ওই নকশাটি বাস্তবায়ন করা ছিল সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ওই মুহূর্তে অত সময় নিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের পরিবেশ ছিল না। তাই নকশাটি সংশোধন করার জন্য নেতস্থানীয় ছাত্র গোলাম মাওলা, শরফুদ্দিন আহমদ, আলীম চৌধুরী এবং সাঈদ হায়দার বদরুল আলমকে পরামর্শ দেন। তখন বদরুল আলম ও সাঈদ হায়দার মিলে আরেকটি নকশা তৈরি করেন। দ্বিতীয় নকশাটি সবার অনুমোদন লাভ করে। ২৩ ফেব্রুয়ারি এটি নির্মাণ করা হয়। (প্রথম আলো, ২১.০২.২০১২)