কবিতার মতো জীবনযাপন তাঁর। শব্দ-বাক্যের ছন্দময় মেলবন্ধ আর কাব্যের প্রতিটি মাত্রার মতোই হিসাব কষে অভিনয় করেন। যে জন্য তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলো বাস্তব হয়ে ধরা দেয় চোখের সামনে। মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে প্রতিটি মুহূর্ত। তিনি ঋত্বিক চক্রবর্তী। কলকাতার বাংলা ছবির নন্দিত অভিনয়শিল্পী।
যাঁর অভিনয় দেখে গুণী নির্মাতা ও শিল্পীদের অনেকে বলেছেন, অভিনয়কে কিছু শিল্পী এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, যা দেখে কবিতায় জীবনযাপন করার লোভ জাগে। ঋত্বিক চক্রবর্তী তাঁদেরই একজন। এমন শিল্পীর জন্ম যুগে যুগে হয় না। 'শব্দ', 'ফড়িং', 'বাকিটা ব্যক্তিগত', 'পরিণীতা', 'চলচ্চিত্র সার্কাস', 'সাহেব বিবি গোলাম', 'নগর কীর্তন', 'ভিঞ্চি দ্য', 'জ্যেষ্ঠপুত্র', 'আসা যাওয়ার মাঝে', 'মাছের ঝোল', 'দ্য ভায়োলিন প্লেয়ার', 'বিনিসুতোয়'সহ প্রায় প্রতিটি ছবিতেই দর্শক প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই অভিনেতা। তাই 'মায়ার জঞ্জাল' ছবির মুক্তি উপলক্ষে ঋত্বিকের ঢাকায় আসার খবর শুনে খানিকটা সময় চেয়ে নেওয়া হয়েছিল তাঁর কাছে।
যে সময়টা এই অভিনেতা ব্যয় করেছেন সমকালের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায়। কথা শুরু করার আগেই একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, কেন অভিনেত্রী অপি করিম তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, 'ঋত্বিকের মতো অভিনেতার ক্যামেরার সামনে অভিনয় করা লাগে না। তিনি দাঁড়ালেই অভিনয় হয়ে যায়।' ঋত্বিকের কথা বলার ভঙ্গি, গুছিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মধ্যে প্রকৃত শিল্পীর অবয়ব ধরা দেয়। শুরুতেই এই অভিনেতার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, অপি করিমের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতার কথা। এক কথায় বললেন, অপি দুর্দান্ত, উঁচুমানের অভিনেত্রী। 'মায়ার জঞ্জাল' ছবিতে আমার স্ত্রী সোমার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সেই অভিজ্ঞতায় এই মন্তব্য।
অপির কারণেই এ ছবিতে আমি চাঁদু চরিত্রটা দারুণ করতে পেরেছি। ঋত্বিকের কথায় ছবির কাজ যখন ভালো হয়েছে, তখন দর্শকের কাছে প্রত্যাশাও বেড়ে যাওয়ার কথা। সেটা জানতে চাইলে তিনি সোজাসাপ্টা বলেন, বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে 'মায়ার জঞ্জাল' প্রত্যাশা পূরণ করবে, এটুকু আশা করতেই পারি। খেয়াল করেছি, এখানকার দর্শকের রুচি বদলাচ্ছে। দর্শক প্রত্যাশা পূরণে সিনেমা নির্মাণেও বাঁক বদল চোখে পড়ছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের চিত্রটা ভিন্ন। ভালো সিনেমা হচ্ছে; কিন্তু হিন্দির কারণে কিছুটা কোণঠাসা বাংলা ছবি। বলিউডের দাপটে, ভালো বাংলা সিনেমাগুলো দর্শকের আড়ালে থেকে যাচ্ছে। 'মায়ার জঞ্জাল' যদি এ দেশের দর্শকের মনোযোগ কাড়ে, তাহলে কী এখানে কাজ করবেন? 'কেন নয়, ভালো কাজের জন্য বিশ্ব মানচিত্রের যে কোনো জায়গায় পা রাখতে পারি।