নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিপুলভাবে ছড়িয়েছে। যুক্তি দিয়ে কথা বলার জন্য তাঁর বেশ ভালো পরিচিতি আছে। তাঁর বক্তব্যটি সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রর পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলের সফর–সম্পর্কিত খবরকে ঘিরে।
খবরটি সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসের (বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা)। ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পর সে সৌজন্য সাক্ষাতের খবরটি ১৬ তারিখের প্রথম আলোয় হুবহু ছাপা হয়েছে। খবরটিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে তাঁরা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাই না।’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতের পর তাঁর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলামকে উদ্ধৃত করে বাসস লিখেছে, শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্পূর্ণ স্বাধীন হওয়ায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। আমি সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি।’ তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো সংসদে ইসির পুনর্গঠন আইন পাস হয় এবং তারপর সেই আইনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
মাহমুদুর রহমান মান্নার পুরো বক্তব্য উদ্ধৃত করার জায়গা এ নিবন্ধে হবে না বলে শুধু সারকথাটাই এখানে তুলে ধরছি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ওই পর্যায়ের আলোচনায় ভোট কারচুপির কথা উঠল কেন? ডেরেক শোলে কি ভোট চুরির কথা জানতে চেয়েছিলেন? যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আওয়ামী লীগকে কারচুপি করে ক্ষমতায় আসতে না চাওয়ার কথা বলতে হলো কেন? ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে জাপানের সদ্য বিদায় নেওয়া রাষ্ট্রদূতের বহুল আলোচিত রাতের ভোটের কথা শোনার কথাও তিনি বলেছেন। মান্নার বক্তৃতায় আরও অনেক কথা আছে, যুক্তি আছে, যেগুলো রাজনৈতিক মঞ্চের উচ্চারণ বিধায় তার পুনরুল্লেখ অত্যাবশ্যক নয়।
বস্তুত রাজনৈতিক বক্তৃতায় মাহমুদুর রহমান মান্না যা বলেননি, সেই প্রশ্নটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রশ্নটা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতারা এবং সরকারের মন্ত্রীরা সারা বছর হম্বিতম্বি করলেন যে, ‘আমাদের গণতন্ত্র শেখাতে হবে না, নির্বাচন নিয়ে আমরা বিদেশিদের কথা (লেকচার) শুনব না’, তারপর সেই বিদেশিদের কেন এসব আশ্বাস দিতে হচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে গলা মিলিয়ে যে ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতেরা মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে বিবৃতি দিলে সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্ষোভ আর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী কার্যালয়ে তাঁদের নিন্দার ঝড় ওঠে, সেসব ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের কেন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে আশ্বাস দিতে হয়? শুধু আশ্বাস নয়, বরং ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি উল্টো বিএনপির বিরুদ্ধে অনুযোগও জানিয়ে এসেছেন। তিনি রাষ্ট্রদূতদের বলেছেন, ‘নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে বিএনপি কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। ২০১৩-১৪ সালের মতো আবারও আগুন-সন্ত্রাসের ওপর ভর করে সরকার উৎখাত ও দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করছে।’