বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আলোচ্য বিষয় ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক এ চ্যাটবটের কাজ কী, এটি কী করতে পারে, এর সুবিধা ও অসুবিধা কী এসব প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারেনি শিল্প ও লেখনীতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রথম হস্তক্ষেপ করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর এ চ্যাটবটের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক সম্পর্কে জানিয়েছে গিজচায়না।
চ্যাটজিপিটি কী?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি ওপেনএআই আধুনিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ এআই মডেল জিপিটি-৩ তৈরি করেছে। মানুষের কণ্ঠস্বরের মতো শব্দ তৈরিতে এর দক্ষতা রয়েছে। পাশাপাশি চ্যাটবটের জন্য টেক্সট তৈরি করা, অনুবাদের জন্য ভাষার মডেল তৈরি করাসহ বিভিন্ন উপযোগিতাও রয়েছে। ১৭ হাজার ৫০০ কোটি বিষয়ের মধ্যে এটি বর্তমানে প্রচলিত সবচেয়ে জটিল ও ব্যাপক ভাষা-প্রক্রিয়াজাত সক্ষমতার একটি এআই অ্যালগরিদম।
চ্যাটজিপিটির ইতিবাচক দিক
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর চ্যাটবটটির বেশকিছু ইতিবাচক দিক বা সুবিধা রয়েছে, যেগুলো নিয়ে ওপেনএআই গর্ব করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
প্রথমত, এ টুলটি খুবই কার্যকরী। যেখানে আগে কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে গবেষণা করতে, বুঝতে ও নিবন্ধ লিখতে এর কয়েক ঘণ্টা সময় লাগত, সেখানে চ্যাটজিপিটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রেফারেন্স অনুযায়ী ভালো নিবন্ধ লিখে দিতে পারবে।
দ্বিতীয়ত, এ প্লাটফর্মের পরিধি বেশ বিস্তৃত। ব্যবহারকারী যে খাতে বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকুক না কেন কমান্ড দেয়ার পর এটি বিস্তৃত ডাটাবেজ থেকে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সামনে উপস্থাপন করবে।
তৃতীয়ত, ওপেনএআই চ্যাটজিপিটি প্রো নামের একটি পেইড ভার্সনও চালু করেছে। প্রতি মাসে ২০ ডলার দেয়ার মাধ্যমে এটি ব্যবহার করা যাবে। ভার্সনটি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রায়োরিটি অ্যাকসেস, দ্রুত পেজ লোড হওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যাবে।
চ্যাটজিপিটির নেতিবাচক দিক
বর্তমানে চ্যাটজিপিটির ব্যবহারিক সুবিধা সীমিত। ব্যবহারকারীর প্রশ্ন যদি বেশি ছোট বা কঠিন হয় তাহলে চ্যাটবটটি যথাযথভাবে উত্তর দিতে পারবে না। ডাটাবেজ ট্রেনিংয়ের সীমাবদ্ধতার কারণে চ্যাটবটটি ২০২১ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ঘটনার বিষয়ে তেমন কিছু জানে না। যে কারণে সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে এটি বিভ্রান্ত হয়ে যায় ও ভুল তথ্য দিয়ে থাকে। এছাড়া চ্যাটজিপিটির আরো কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে।
সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং: চ্যাটজিপিটির শক্তিশালী ভাষা মডেলের মাধ্যমে আক্রমণকারীরা সহজে ফিশিং মেসেজ তৈরি করতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানসহ ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ইনস্টলে ভুক্তভোগীকে বাধ্য করা যায়।
স্ক্যামিং: চ্যাটজিপিটির ভাষাগত মডেল ব্যবহারের মাধ্যমে হ্যাকাররা ভুয়া বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য স্ক্যাম ম্যাটেরিয়াল তৈরি করতে পারে। ফলে যেকোনো খাতে আক্রমণ পরিচালনা করা হ্যাকারের জন্য সহজ হয়ে ওঠে। এছাড়া টেক্সটভিত্তিক কনটেন্ট ব্যবহার করে আক্রমণকারীরা। এজন্য চ্যাটজিপিটির সহায়তায় বিশ্বাসযোগ্য ডিজিটাল কপি তৈরি করা হয়।
আক্রমণের অটোমেশন: স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্ষতিকর ও ফিশিং ইমেইল তৈরিতে আক্রমণকারীরা চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে পারে। এর মাধ্যমে আরো বড় পরিসরে আক্রমণ করা যায়।
স্প্যামিং: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটজিপিটির ভাষাগত মডেল ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই নিম্নমানের কনটেন্ট তৈরি করা যায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন স্প্যাম ইমেইল ক্যাম্পেইন অথবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিমার্ক তৈরিতে এগুলো ব্যবহার করা যায়।