ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের আশা অনেক। সেই আশা কি পূরণ হচ্ছে? শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, অপরাজনীতি, নির্যাতন, দুর্নীতি সবই আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এইসব বন্ধে প্রশাসনের খুব একটা তোড়জোড় দেখা যায় না। প্রশাসন সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় শিক্ষক নিয়োগে।
শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া
পৃথিবীর ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বলুন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কেবল মাত্র একটি স্তরে একটি ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, শিক্ষার্থীদের উপর একজন ভালো শিক্ষকের ভূমিকা ও গুরুত্ব কতটা তা কি এই যুগে এই সময়ে ব্যাখ্যা করার দরকার আছে?
একজন উন্নত মানের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক খাদে পরা অনেক শিক্ষার্থীর জীবনের মোর ঘুরিয়ে দিতে পারে। আবার একজন খারাপ শিক্ষক ভালো শিক্ষার্থীকে হতাশায় নিমজ্জিত করতে পারে। তাই শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশন নীতিমালা একাধিক স্তরে বিভক্ত হতে হয় যেন কোনোভাবেই ভালোকে ডিঙিয়ে খারাপ মানের কেউ শিক্ষক হয়ে যেতে না পারে।
এইজন্যই শিক্ষক নিয়োগের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো সংশ্লিষ্ট বিভাগের। বিভাগের নেতৃত্বে একটি সার্চ কমিটি থাকতে হয়। যেই কমিটিতে দেশ বিদেশের খ্যাতিমান স্কলাররা সদস্য হিসেবে থাকবে। তারা প্রার্থীদের সব কাগজপত্র, গবেষণাপত্র দেখে একটি শর্টলিস্ট করবে।
সেই শর্টলিস্টে যারা থাকবে বিভাগ তাদের ডেকে ইন্টারভিউ নেবে, দিনব্যাপী সেমিনার আয়োজন করবে যেখানে ছাত্র শিক্ষক সবাই থাকবে এবং সব শেষে সবার মতামত নেবে। সেই মতামতের ভিত্তিতে আরেকটি শর্টলিস্ট করবে যাদেরকে উচ্চতর নিয়োগ বোর্ডে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হবে এবং সেই ইন্টারভিউয়ের ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে। এইভাবে করলে রাজনৈতিক নিয়োগ, ভোটার নিয়োগ ইত্যাদি একদম কমে যাবে।
শিক্ষক নিয়োগের শর্ত আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা বিশেষ গুরুত্ব পায়। যাদের পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা আছে বুঝতে হবে তারাই শর্টলিস্টেড।
পোস্ট-ডক একটা স্বীকৃতি। তাই যার যত বছরের পোস্ট-ডক আছে তাকে অন্তত তত বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা হিসেবে ধরতে হবে। একজন পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক পাওয়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দারুণ ব্যাপার কারণ তাকে পিএইচডি-র জন্য বেতন সহকারে ছুটি দিতে হবে না। তাকে পোস্ট-ডকের জন্য পূর্ণ বেতনে ছুটি দিতে হবে না।
পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক, পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক, যার একাধিক সুপারভাইজারের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা আছে যা শিক্ষকতা ও গবেষণার জন্য সেরা ট্রেনিং হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
এখন এইরকম পিএইচডি ও পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক পেলে তাকে কি সাধারণ বেতন দিলে হবে? আমরা কি উচ্চ মাধ্যমিক পাস আর অনার্স পাস করা শিক্ষকদের সমান বেতন দেব? আমরা কি অনার্স পাস এবং মাস্টার্স ডিগ্রিধারীদের সমান বেতন দেব বা দেই?
এইগুলোর সুরাহা না করলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কখনোই বিশ্বমানের হবে না। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বমানের না করলে দেশে সত্যিকারের উন্নয়ন হবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা পাস করে বের হবে তারাই দেশকে নেতৃত্ব দেবে।
ছোট্ট একটা দেশ সিঙ্গাপুর, এত উন্নত হতে পেরেছে কারণ তাদের একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় আছে। একই কথা বলা চলে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, চীন এবং জাপানের ক্ষেত্রে। বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত কোনো জাতি উন্নত হতে পারে না।