১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ঢাকায় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদ ১১ মার্চ সারা পূর্ববাংলায় ধর্মঘট আহ্বান করে। ১১ মার্চ নারায়ণগঞ্জে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়। বিভিন্ন স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল শিল্পাঞ্চলের লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিল ও ঢাকেশ্বরী কটন মিলেও সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়। সেখানে ছাত্র ও শ্রমিকদের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ মার্চ আনন্দবাজার পত্রিকা 'বাংলা ভাষার দাবিতে নানা স্থানে হরতাল' শিরোনামের সংবাদে উল্লেখ করে, 'নারায়ণগঞ্জের লক্ষ্মীনারায়ণ মিলের শ্রমিকগণ ও ঢাকেশ্বরী মিল হাই স্কুলের ছাত্ররা হরতাল পালন করে।'
১৯৫২ সালের জানুয়ারির শুরুতেই নারায়ণগঞ্জে মফিজ উদ্দিন আহমেদ ও আজগর হোসেন ভূঁইয়াকে যথাক্রমে আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক করে সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। '৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট শেষে বিকেলে রহমত উল্লাহ মুসলিম ইনস্টিটিউটের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ চলাকালেই আবুল কাসেমের কাছ থেকে নারায়ণগঞ্জবাসী জানতে পারে- ঢাকায় ছাত্র মিছিলে গুলি হয়েছে এবং কয়েকজন ছাত্র মারা গেছে। মূহূর্তেই নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছাত্রীদের বিশাল মিছিল বের হয় প্রধান শিক্ষিকা মমতাজ বেগমের নেতৃত্বে। ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে বাস ও ট্যাক্সি ড্রাইভার-হেলপাররা ধর্মঘট শুরু করলে বাস-ট্যাক্সি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
২১ ফেব্রুয়ারি রাতেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণে জিন্নাহ সড়কের চাষাঢ়ার পাক-বে ভবনের (নারায়ণগঞ্জে এটি পাক ভাই বিল্ডিং হিসেবে পরিচিত, বর্তমানে এ ভবনে নারায়ণগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন অবস্থিত) পেছনের পুকুরপাড়ে পূর্ব পাকিস্তান লেবার ফেডারেশনের কার্যালয়ে একটি গোপন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় শফি হোসেন খান, ডা. মজিবুর রহমান, শামসুজ্জোহা, বজলুর রহমান, মশিউর রহমান, নাজির মোক্তার, বাদশা মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সভায় ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জে একটি বড় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়। সে রাতেই শ্রমিক জমায়েতের জন্য শফি হোসেন খান ও কাজী মজিবর শ্রমিক এলাকায় চলে যান।