মহান ভাষার বিপ্লব থেকেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সমগ্র জাতিকে এভাবে একাত্ম হতে এর আগে কখনও কেউ দেখেনি। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশের সংস্কৃতির অন্যতম সফল মাধ্যম থিয়েটার অঙ্গনে ভাষা বা একুশের চেতনাভিত্তিক নাটক অপ্রতুল। আমাদের চেতনালব্ধ ভাষা ও গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও আমরা যেন এর সঠিক মর্যাদা দিতে ভুলে গেছি। বিশেষ করে থিয়েটারের ক্ষেত্রে।
একুশে বা ভাষা আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন শাখায় প্রচুর সৃজনকর্ম হয়েছে। কিন্তু মঞ্চাঙ্গনে কিছু পথনাটক ও হাতেগোনা কয়েকটি মঞ্চনাটক ছাড়া উল্লেখযোগ্য মৌলিক নাটক রচিত হয়নি। ভাষা আন্দোলন-পরবর্তী আজ পর্যন্ত মর্মমূল এ প্রেক্ষাপটে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর আলোচিত নাটক 'কবর'কেই সার্থক নাটক বলা যেতে পারে। কেননা, এ নাটকটি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সর্বস্তরের মানুষকে আলোড়িত করার পাশাপাশি জাতীয় জীবনেও দারুণভাবে আলো ফেলেছে। মহান ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে নাট্যকাররা নতুন নতুন নাটক রচনায় উদ্যোগী হবেন বলে আশা করছি।
একটি কথা না বললেই নয়, মঞ্চে ভুলভাল সংলাপ বলছেন অনেকেই। মায়ের সঙ্গে ছেলে কথা বলবে আঞ্চলিক ভাষায়, এটি কোনো সমস্যা নয়। বাইরে যখন বলবে তখন প্রমিত বাংলায় বলবে। মঞ্চনাটকে দুটোই ব্যবহূত হচ্ছে। যখন পরিশুদ্ধ বাংলা বলে, তখন বেশিরভাগ লোক ঠিকভাবে বলে না। অনেক ভুলভাল বলে। অনেক জ্ঞানী লোককেও দেখেছি ভুল করতে। মঞ্চে নির্দি্বধায় বলে যাচ্ছেন। তাঁদের মুখে 'দারিদ্রতা' শব্দও শুনেছি। হয় দরিদ্রতা অথবা দারিদ্র্য। দারিদ্রতা কথাটি সঠিক নয়। মঞ্চে এটি বলা হচ্ছে। 'হে দারিদ্র্য তুমি করেছো মহান' নজরুলের কবিতাটি তাঁরা ভালোভাবে পড়েননি। নব্বই ভাগ লোকে উচ্চারণ করেন 'সখ্যতা'। আমার সঙ্গে তোমার সখ্য আছে। সখা থেকে সখ্য। না জানার ফলেই এমনটি হচ্ছে। মঞ্চে কোনো সংলাপ বলার আগে জেনেবুঝে বলা উচিত। শেকসপিয়রের নাটক যে গেঁয়ো ভাষায় হবে না, তা কিন্তু নয়। যখন আমি নোয়াখালী বা চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলব, তখন সে ভাষায়ই সংলাপ বলব। বরিশালের ভাষায় বললেও তাদের আঞ্চলিক ভাষায় বলব।