সম্প্রতি ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ ও ‘অনুশীলনী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণের পর থেকেই সেগুলোর নানা বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক চলছিল, যার একটি ছিল ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে বিবর্তনবাদের অন্তর্ভুক্তি। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া সর্বত্রই এই বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ এনসিটিবি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ক্লাসে এই দুটি বইয়ের পাঠদান আপাতত বন্ধ থাকবে এবং বই দুটো নতুন করে প্রণীত হবে। প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা যায়, সামরিক শাসনকালে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি থেকেও বিবর্তনবাদ বাদ দেওয়া হয়েছিল।
প্রথমেই উল্লেখ করা দরকার, ডারউইনের বিবর্তনবাদ কোনো তত্ত্ব নয় বরং মতবাদ। শুরু থেকেই এই যুগান্তকারী মতবাদ নিয়ে বিতর্ক ছিল। তৎকালীন সমাজ এবং চার্চ কেউই ডারউইনকে ছেড়ে কথা বলেনি। সেই সুবাদে তখন থেকেই বিবর্তনবাদ নিয়ে নানা অপপ্রচারও চালু হয়ে যায়। এরকম অপপ্রচারগুলোরই একটি হলো ‘মানুষ বানর থেকে এসেছে’। অথচ বিবর্তনবাদের মূল বক্তব্য এমন নয়। বিবর্তনবাদ আলোচনার মূল কথা হলো সময় এবং পরিবেশ-প্রতিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকূল পরিবেশে প্রাণিকুলের নিজ নিজ প্রজাতি ও আন্তঃপ্রজাতির মধ্যে টিকে থাকার প্রয়োজনে খাপ খাইয়ে নেওয়া। কাজেই বিবর্তনবাদ নিয়ে যে বিতর্কটা চলছিল, সেটা খোদ বিবর্তনবাদ বা পাঠ্যপুস্তকে কী ছাপা হয়েছে সে সম্পর্কে না জেনেবুঝেই করা হচ্ছিল। বাদ পড়া বইয়েও বানর থেকে মানুষ তৈরির দাবি করা হয়নি। ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান-এর অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের ‘মানুষ ও সমাজ এলো কোথা থেকে?’ অংশে বলা হয়েছে, ‘অনেকে বলেন, মানুষের উদ্ভব হয়েছে নাকি বানর থেকে। এ কথা ভুল।’ আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মনে রাখতে হবে, বানর বা শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষের উদ্ভব হয়নি।’ অর্থাৎ এই বিতর্কটা চলছিল নিছক গুজবের ওপরে ভর করে।