মোটামুটির সংস্কৃতি ও রাজনীতির মধ্যম পন্থা

সমকাল জাহেদুল আলম হিটো প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:৩৪

বাংলাদেশের মানুষ 'মোটামুটি' সংস্কৃতিতে আস্থাশীল। এ দেশে কাউকে কুশল জিজ্ঞেস করলে প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, 'মোটামুটি আছি'। কেউ কেউ হয়তো 'ভালো আছি' বলেন। তবে মোটের ওপর সবাই বলেন- 'মোটামুটি আছি'। অর্থাৎ মধ্যপন্থা এ দেশের মানুষের মজ্জাগত। এই যে আমি বললাম 'মোটের ওপর'; এটিও আমার মোটামুটি অবস্থান। এ দেশে এক নম্বর আর দুই নম্বরের মাঝামাঝি কী? এক আর দুইয়ের মাঝামাঝি হচ্ছে সাধারণ। আমাদের এই সাধারণের সংস্কৃতি হচ্ছে মোটামুটির সংস্কৃতি।


আমাদের দেশে কোনো ছাত্রছাত্রীকে 'পরীক্ষা কেমন হয়েছে'- জিজ্ঞেস করলে সাধারণত তারা মোটামুটির পক্ষে মত দেয়। কেউ কেউ হয়তো 'ভালো' বলে। আবার কেউ হয়তো বলে 'খারাপ'। তবে অধিকাংশ বলে, 'মোটামুটি'। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা মানুষ আমরা। যেন আমাদের আবহাওয়াই আমাদের মতামতের, পছন্দের সিদ্ধান্ত বাতলে দেয়। আমরা কেউ দোকানে গেলে মাঝামাঝি দামের জিনিসই বেশি পছন্দ করি। খুব বেশি দাম দিয়ে কেনার মানুষ এ দেশে অল্প। খুব কম দামে বা সস্তায় কেনাকাটা করার মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও তাঁরাও মাঝামাঝি মূল্যেই জিনিসপত্র কেনার ইচ্ছে লালন করেন। অর্থাৎ আপাতভাবে এ দেশের অধিকাংশই মধ্যপন্থার মানুষ।


প্রাচ্যে ধর্মের প্রভাব বেশ। বৌদ্ধ ধর্মটাই মধ্যপন্থার। মধ্যপন্থা হলো গৌতম বুদ্ধের এক উপলব্ধিবোধ। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, ভৈব বা চূড়ান্ত কৃচ্ছ কোনোটিই পরম সত্য অনুধাবনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়। এ জন্য তিনি মধ্যপন্থা অবলম্বনের পক্ষে মত দেন। ইসলামেও মধ্যপন্থাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।তাহলে আমাদের দেশের মানুষ কি ধর্ম মেনেই মধ্যপন্থা অবলম্বন করছেন? মনে হয় না। মধ্যপন্থা এ দেশের মানুষের সহজাত আচার বা চর্চা।


রাজনৈতিক মতাদর্শের ক্ষেত্রে বামপন্থা বা ডানপন্থা কোনোটিই এ দেশের মানুষের কাছে খুব বেশি সমাদৃত হয়নি। কমিউনিস্ট পার্টি এ দেশে অনেক প্রাচীন একটি দল। আবার জামায়াতে ইসলামী দলের ইতিহাসও বেশ পুরোনো। কিন্তু এ দুটি দল এ দেশের মানুষের কাছে খুব বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বিপ্লব বা শ্রেণি-সংগ্রাম- কোনোটিই ঘটেনি এই দেশে। ভোটই এ দেশে মানুষের কাছে সরকার গঠন বা সরকার পরিবর্তনের প্রধানতম ও স্বীকৃত উপায়। এই জনপদে ভোটের সংস্কৃতি চালু হওয়ার পর থেকে তা ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভোটে অবিশ্বাসী রাজনৈতিক মতাদর্শীরাও তা মেনে নিয়ে ভোটে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তো আপনি যদি এই ভোট ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে থাকেন, তবে আপনি মধ্যপন্থার বিরুদ্ধাচরণ করলেন। এতে আপনার গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাবে; জনপ্রিয়তায় ধস নামবে- তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।


এ দেশে 'বাড়াবাড়ি' বাড়াবাড়ি রকমের নেতিবাচক পদবাচ্য। কোনোকিছুতেই বাড়াবাড়ি বা আতিশয্য এ দেশের অধিকাংশের কাছে অপছন্দ। মোটামুটি স্বভাবের বাংলাদেশের মানুষ মূলত মেনে নেওয়ার পক্ষে। আপাত এই দেশের মানুষকে ধৈর্যহীন ও অস্থির মনে হলেও তলানিতে তাঁরা ধৈর্যশীল। আমার তো তা-ই মনে হয়। মনে হয় এই কারণে যে, এ দেশের ইতিহাসের বাঁক পর্যবেক্ষণ করলে আমরা দেখি; একান্ত বাধ্য না হলে এ দেশের মানুষ কখনও উত্তেজিত হয়নি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us