গীতা বিশ্বাস দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন খোলা ট্রাক থেকে চাল কেনার জন্য। কিন্তু ট্রাকের কাছে যখন পৌঁছলেন, ততক্ষণে চাল ফুরিয়ে গেছে। ক্ষুধা এমন জিনিস, মানতে চায় না কিছুই। গীতা শেষ পর্যন্ত চালের ট্রাকেই উঠে পড়েন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেড় কেজির মতো চাল কুড়িয়ে নিজের থলেতে ভরেন। কিন্তু তাও কেড়ে নিতে চায় খোলা ট্রাকে চাল বিক্রি করা মালিকের কর্মচারী। তাঁদেরও জীবন অনেক কষ্টের। গীতা বিশ্বাসের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। তিনি তা আদতেই জানেন কিনা বা জানলেও প্রশ্ন করার ক্ষমতা নেই- সেই টাকা কোথায়?
সংবাদমাধ্যমে ছবিসহ প্রকাশিত এ ঘটনা চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ এলাকার। গত কয়েক মাসে দৈনিক সমকালসহ দেশের প্রায় সব পত্রিকায় উঠে এসেছে গরিব মানুষের দুর্দশার চিত্র। প্রকাশিত খবর একসময় বাসি খবরে পরিণত হয়েছে। কাজের কাজ হয়নি কিছুই। থলে হাতে বাজারে গিয়ে অপূর্ণ থলে নিয়ে ঘরে ফেরে নিম্নবিত্ত। মুদ্রাস্ম্ফীতি বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে পণ্যমূল্য। মুদ্রানীতির ফলে অস্থির হয়েছে ডলারের বাজার। গরিব মানুষের আয় বাড়েনি; বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। ফলে মুদ্রাস্ম্ফীতিতে আসল আঘাতটা গরিব মানুষের মাথায়। আইএমএফ থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে কঠিন শর্তে। সেই শর্ত গরিব মানুষের মাথার ওপরেই পড়বে। সেটি পড়তেও শুরু করেছে। আইএমএফের প্রধান শর্ত- জ্বালানির ওপর ভর্তুকি কমাতে হবে। শর্ত অনুসারে দুই দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দামও। তাতে উৎপাদন খরচ বাড়বে; পাল্লা দিয়ে বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম।
করোনাকাল থেকেই জনগণের এমন অবস্থা। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা বলছে, নতুন করে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে ২০ শতাংশ। আগে ছিল আরও ২০ শতাংশ। সব মিলিয়ে ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত। করোনাকালে সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও এটি মোকাবিলায় সাফল্য আছে। কিন্তু যুদ্ধ ও মহামারির পরের সময়টা যে আরও কঠিন হয়- এটি কি জানা ছিল না?
করোনা মহামারি-পরবর্তী বিশ্বে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দেশে দেশে অর্থনৈতিক সংকট প্রকট করে তুলেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় যে শুধু বাংলাদেশে বাড়ছে, এমনটা নয়। কিন্তু বাংলাদেশের জণগণের ওপর সংকটটি প্রকটভাবে আঘাত হানছে।
গত এক বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। জনগণের আয় বাড়েনি। ওদিকে ব্যাংক থেকে উত্তোলিত ঋণের টাকা নির্দিষ্ট খাতে ব্যবহূত না হয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত কিংবা পাচার হয়ে গেছে। ফলে বেশ কয়েকটি ব্যাংক আর্থিক সংকটে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে দেশের উচ্চ আদালত একাধিকবার বিভিন্ন আর্থিক মামলায় উষ্ফ্মা প্রকাশ করেছেন। দুদকের আইনজীবীকে বারবার প্রশ্ন করছেন। সর্বশেষ একটি মামলায় দেখা গেছে, এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নামে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কানাডায় সম্পদ গড়েছেন। উচ্চ আদালত প্রশ্ন তুলেছেন- দ্বৈত নাগরিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন কিনা? সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যাচ্ছে, উচ্চ আদালতের বিচারপতিরা প্রশ্ন করেছেন- 'এ দেশটা কি হরিলুটের জায়গা?'