শেষ পর্যন্ত দেশের জন্য আইএমএফের ঋণপ্রাপ্তি ঘটেছে, প্রথম কিস্তির অর্থও চলে এসেছে। বাংলাদেশ চেয়েছিল ৪.৫ বিলিয়ন ডলার; কিন্তু ঋণ প্রদানকারী সংস্থার নির্বাহী বোর্ড অনুমোদন করেছে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার। এ যেন বন্দুকের জন্য দরখাস্ত করে কামান পাওয়ার মতো অবস্থা। এজন্য অর্থমন্ত্রী তার অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও আইএমএফের সংশ্লিষ্ট নির্বাহীদের অত্যন্ত পুলকিত বদনে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। দেশ যে এখনো খাদে পড়ে যায়নি, দেশের ঋণমান যে এখনো দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির এই ঋণ অনুমোদন তার এক উজ্জ্বল প্রতিভাস হিসেবে বিবেচনায় নিলে এই পুলক অনুভব অযৌক্তিক কিছু নয়।এতে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও অর্থ ধার করার ক্ষেত্র প্রসারিত হলো; সেসব ক্ষেত্রে অল্প আলোচনাতেই ঋণের প্রয়োজনীয়তা ও নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে উপসংহারে উপনীত হওয়া যাবে।
৪২ মাসে ছাড়যোগ্য ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের এই ঋণ তিনটি প্যাকেজে বিভক্ত : ক) Extended Credit Facility, EDF, খ) Extended Fund Facility, EFF এবং গ) Resilience and Sustainable Facility, RSF। ঋণের প্রথমোক্ত অংশটি সুদমুক্ত; সাড়ে ৫ বছর পারিতোষিক কালসহ পরবর্তী ১০ বছরে পরিশোধযোগ্য। দ্বিতীয়াংশে উল্লিখিত অংশটিও ১০ বছরে পরিশোধযোগ্য, তবে পারিতোষিক কাল সাড়ে ৩ বছর। আর শেষাংশে উল্লিখিত নতুন অংশটির পরিমাণ ১.৪ বিলিয়ন ডলার যা ২০ বছরে পরিশোধযোগ্য, আর পারিতোষিক কাল ১০ বছর। সুদযোগ্য ঋণাংশে সুদ মাত্র ২.২ শতাংশ। বৈশ্বিক অর্থনীতির এই কঠিন সময়ে এত স্বল্প সুদে এরকম দীর্ঘ সময়ের জন্য এই রকম ঋণ পাওয়াটা দেশের জন্য অবশ্যই একটা বড় অর্জন। তবে এই ঋণ দেশের ক্রমাবনতিশীল বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার ও অস্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতিকে কতটা স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়, সেটা দেখার বিষয়। কারণ, দেশের চাহিদার তুলনায় এই ঋণের পরিমাণ তেমন কিছু নয়; দেশের প্রায় ২ মাসের রেমিট্যান্সের প্রায় সমপরিমাণ। তদুপরি এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নানা শর্ত, যেগুলো সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে।