বাংলাদেশের ইংরেজি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রথম শ্রেণী থেকে ত্রয়োদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক সাক্ষরতা শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রথম শ্রেণী থেকে উচ্চতম শ্রেণী পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যমে ঐচ্ছিক শিক্ষা কার্যক্রম—এ দ্বিবিধ শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে গঠিত। এ শিক্ষা ব্যবস্থা সর্বাত্মক এবং দেশব্যাপী বিস্তৃত। বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে ইংরেজি ভাষা হলো দেশীয় বিদেশী ভাষা। এ শিক্ষা ব্যবস্থা যে আদর্শের ছুতো ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার অন্যতম হলো ‘বিশ্বায়ন’। অথচ বিশ্বায়নকে যদি ভাষা-রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে নিয়ে কোনো ভাষা শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাহলে সেখানে শুধু ইংরেজিসহ অন্যান্য বিদেশী ভাষাও শিক্ষা ব্যবস্থায় অঙ্গীভূত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেশে এখন একটি ইংরেজিনির্ভর একক বিদেশী ভাষা শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে এর কুফল দেশের সমাজ ও সংস্কৃতিতে প্রতিফলিত হচ্ছে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০-৩০ বছরের মধ্যে দেশের প্রায় ৫০ লাখ লোকের প্রথম ভাষা হবে ইংরেজি, যাদের কাছে বাংলা হবে দ্বিতীয় ভাষা। তাদের অধিকাংশের ইংরেজি জ্ঞান হয়তো বেসরকারি বাণিজ্যিক দপ্তরের ৮-১০ রকমের দলিলপত্র বোঝার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু এ শ্রেণীটি আগামী বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। যাদের প্রথম ভাষা বাংলা, তারা এ দেশে রাজনীতি ও অর্থনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়বে। বাঙালি জাতির জন্য বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। কেননা ইংরেজি ভাষাভাষীরা দেশের জাতীয় মূলনীতিগুলোকে পাশ কাটিয়ে এ দেশেরই অর্থে দেশে তাদের মতো করে একটি সংস্কৃতি ও জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে নেবে। বলা যায়, ২০-৩০ বছর পর এ জনগোষ্ঠী দেশে একটি শাখা জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। স্মর্তব্য, এ পরিমাণ জনগোষ্ঠী অনেক দেশেই নেই।