গত অক্টোবরে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের- জি এম কাদের নামেই যিনি সমধিক পরিচিত- যে রাহুর দশা শুরু হয়েছিল তা আপাতত কেটেছে বলেই মনে হচ্ছে। রোববার সমকাল অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপা চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর দায়িত্বপালনের ওপর নিম্ন আদালতের দেওয়া সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞাটি ওই দিন উচ্চ আদালত স্থগিত করেন; তাই জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালনে আর বাধা রইল না।
তাঁর এ রাহুমুক্তির মেয়াদ 'আপাতত' বলার কারণ হলো, উক্ত স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে মাত্র আট সপ্তাহের জন্য; এর পাশাপাশি আদালত একটা রুলও জারি করেছেন নিম্ন আদালতের ওই রায় কেন স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে। অর্থাৎ জি এম কাদেরের চূড়ান্ত রাহুমুক্তির জন্য যে আইনি প্রক্রিয়া তা শেষ হতে আরও সময় লাগবে। তা ছাড়া, আলোচ্য মামলাটি দায়ের করেছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি- গণঅভ্যুত্থানের মুখে যিনি ১৯৯০ সালে অবৈধভাবে দখলকৃত রাষ্ট্রক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হন- হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত দলটির বহিস্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধা, গত ৪ অক্টোবর। গত ২৩ অক্টোবর দলটির প্রেসিডিয়ামসহ সব ধরনের পদ হারানো মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রায় একই ধরনের আরেকটি মামলা জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে আদালতে রুজু করেছেন; সেটিও এখন ঝুলে আছে।
জিয়াউল হক মৃধার মামলায় জি এম কাদেরের চেয়ারম্যানশিপের ওপর নিম্ন আদালত প্রথমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ৩০ অক্টোবর। এর বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করেন জি এম কাদের; তা বাতিল হলে তিনি হাইকোর্টে যান, যেখানে নিম্ন আদালতের ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হয়। তখন মৃধা যান চেম্বার জজের কাছে; সেখানে হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ স্থগিত হয় এবং পাশাপাশি বিষয়টি নিয়মিত শুনানির জন্য পাঠানো হয় আপিল বিভাগে। আপিল বিভাগ চেম্বার জজের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে মামলাটি ৯ জানুয়ারির মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য নিম্ন আদালতেক নির্দেশ দেন। সেই অনুসারে নিম্ন আদালত গত ১৯ জানুয়ারি দেওয়া তার রায়ে জি এম কাদেরের ওপর স্থগিতাদেশ বহাল রাখলে তিনি আবারও উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন, যেখান থেকে রোববারের আদেশটি এলো।
এই যে তিন মাসের বেশি সময় ধরে নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত এবং উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালতের বারান্দায় ঘুরাঘুরির পাশাপাশি রাজনীতি থেকে এক প্রকারের নির্বাসন, জি এম কাদেরের ভোগান্তি কিন্তু এখানেই থেমে ছিল না। এর আগে হঠাৎ করেই গত আগস্ট মাসে তাঁর ভাবি এবং দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেন। এ নিয়ে শুরু হয় দু'পক্ষের মাঝে চাপানউতোর। জি এম কাদের পক্ষ রওশনকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার আসন থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্পিকারকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেন; যদিও স্পিকার দৃশ্যত সরকারের সিদ্ধান্তের আশায় বিষয়টি অনেক দিন ঝুলিয়ে রাখেন।
এটাও বলা দরকার যে, দলে জি এম কাদেরের কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে নেওয়া রওশনের ওই কাউন্সিলবিষয়ক সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে আসে যখন জি এম কাদের সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সংসদের ভেতরে ও বাইরে প্রায় সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির ভাষায় সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন। তিনি এমনকি আগামী নির্বাচনে জাপার অংশগ্রহণের বিষয়েও নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন।