মেক্সিকো সিটির দক্ষিণে জচিমিলিকো প্রণালি ধরে নৌকায় চেপে আপনি পৌঁছে যাবেন লা আইলা দ্য লস মুনেক্স বা পুতুলের দ্বীপে। এমন নাম না পাওয়ার কোনো কারণও নেই। দ্বীপে নামার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের স্বাগত জানায় হাজারো পুতুল। কোনোটা বড়, কোনটা ছোট। কোনোটা দেখতে অদ্ভুত, কোনোটা আবার রীতিমতো বীভৎস। সবকিছু মিলিয়ে দ্বীপে প্রবেশ করার পর যদি গা ছমছম করতে থাকে, দোষ দেওয়া যাবে না আপনাকে।
দ্বীপে মানুষের স্থায়ী আবাস নেই। নেই বিদ্যুৎ কিংবা কলের পানির ব্যবস্থা। পাকা দালান তৈরি নিষেধ, কিছু দোকানপাট আছে, সেগুলো কাঠের তৈরি। আর স্থাপনাগুলোর ভেতরে কেবলই পুতুল আর পুতুল। কোনোটা দেয়ালে সাঁটানো, কোনোটা ঝোলানো। ঘরের ছাদ, গাছ এমনকি তীরে ভেড়ানো নৌকায়ও ঝুলতে দেখবেন পুতুলদের।
এই দ্বীপ পুতুলময় হওয়ার শুরু ১৯৫০ সালের দিকে। স্থানীয়দের মুখে মুখে প্রচলিত গল্প অনুযায়ী, ওই সময় একটি মেয়েশিশু এখানকার তেশুইলা হ্রদের পানিতে পড়ে যায়। ডন জুলিয়ান সান্টানা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা শিশুটিকে বাঁচাতে ঝাঁপ দিলেও লাভ হয়নি। তারপর থেকেই মেয়েটির আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে পুতুল সংগ্রহ শুরু করেন সান্টানা। অবশ্য সান্টানার অনেক আত্মীয়স্বজনের ধারণা, আসলে এমন কোনো মেয়ে ছিলই না, গোটা বিষয়টি ছিল তাঁর কল্পনা।
দ্বীপে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা পাবেন পুতুলদের। ছবি: ফেসবুকদ্বীপ ভ্রমণে টেক্সাস থেকে আসা জোসে পেরেজ নামের এক পর্যটক জানালেন, রাতে বেশ ভূতুড়ে লাগে দ্বীপটিকে। ‘আপাতদৃষ্টিতে খুব শান্ত একটি জায়গা মনে হয় একে। তবে রাতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয় এখানে, মনে হয় সবগুলো পুতুল আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে।’ বলেন তিনি।
পুতুলদ্বীপেই থাকেন ট্যুর গাইড জোসে গ্যাব্রিয়েল গনজালেজ ফ্রাংকো। জানান, নিজের বালক বয়স থেকেই ডন জুলিয়ান সান্টানাকে চিনতেন। তিনি বলেন, ‘সন্টানা মেয়েটিকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হন।’
তবে ওই দুর্ঘটনার কথা কোনো সরকারি নথিতে নেই। যেখানে মেয়েটি মারা গেছে, সেখানে সন্টানা একটি সাদা ক্রুশ পুঁতে রাখেন বলে জানা গেছে। ক্রুশ বসানোর পর দ্বীপে অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেন সান্টানা। তিনি নানা ধরনের ছায়া দেখার পাশাপাশি কান্না আর চিৎকার শুনতে পান। ওই চিৎকারে থাকত দুঃখের রেশ।